৩০ বছরের মধ্যে বাংলাদেশে ভয়াবহ বন্যা, পাকিস্তান সব ধরনের সাহায্য দিতে প্রস্তুত, ভারতের কাছে বিশেষ আবেদন ইউনুস সরকারের

by Chhanda Basak
They blamed India for the terrible floods in Bangladesh

বাংলাদেশে ভয়াবহ বন্যায় এ পর্যন্ত ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্ত হয়েছেন ৪৮ লাখ মানুষ। গত কয়েকদিনের হিসাবে বাংলাদেশ প্রায় ভেসে গেছে। তবে ইউনুস খানের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার ভারতের কাছে সাহায্য চেয়েছে। ভারত আগেই বলেছে, বাংলাদেশের বন্যা পরিস্থিতির জন্য নয়াদিল্লী দায়ী নয়। তবে নতুন সরকারের বন ও পরিবেশ বিভাগের উপদেষ্টা সৈয়দ রিজওয়ানা হাসান আবেদন করেছেন, ভবিষ্যতে বন্যা পরিস্থিতি এড়াতে ভারত যেন তাদের আগেই সতর্ক করে দেয়।

সংবাদ সম্মেলনে রিজওয়ানা হাসান বলেন, এই পরিস্থিতি এড়াতে আমরা আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ভারতের কাছে আবেদন জানাব। শুক্রবার বন্যা দুর্গত এলাকা পরিদর্শন শেষে তিনি এ কথা বলেন।

এদিকে, বাংলাদেশের নতুন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মোহাম্মদ ইউনুস বৃহস্পতিবার প্রস্তাব করেছেন যে এমন একটি ব্যবস্থা তৈরি করা উচিত যার মাধ্যমে ভারত ও বাংলাদেশ যৌথভাবে জরুরি পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে পারে। বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের রাষ্ট্রদূত প্রণয় ভার্মার সঙ্গে দেখা করেও ইউনূস এ কথা বলেন। ভারতের ডুম্বুর ড্যাম থেকে জল ছাড়ার কারণে এ বন্যা হয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যম। ভারত সরকার ইতিমধ্যে এই তত্ত্ব প্রত্যাখ্যান করেছে।

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ বাংলাদেশে বন্যায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং সাহায্যের প্রস্তাব দিয়েছেন। শুক্রবার বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মোহাম্মদ ইউনূসের কাছে একটি চিঠি লিখেছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী।

চিঠিতে শরীফ লিখেছেন, “পাকিস্তান সাহসের সাথে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের পাশে দাঁড়িয়েছে যারা তাদের প্রিয়জন, বাড়িঘর এবং চাকরি হারিয়েছে। আমরা বাংলাদেশকে যেকোনো ধরনের সহায়তা দিতে প্রস্তুত আছি।”

They blamed india for the terrible floods in bangladesh

বিনা সতর্কতায় জল ছাড়ার অভিযোগ ভারতের বিরুদ্ধে

এর আগে খালেদা জিয়ার বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) সহ অন্তর্বর্তী সরকারের কয়েকজন নেতাও এই বন্যার জন্য ভারতকে দায়ী করেছিলেন। শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করা শিক্ষার্থীদের নেতা নাহিদ ইসলাম অভিযোগ করেন, ভারত কোনো সতর্কতা ছাড়াই জল ছেড়েছে। নাহিদ এখন বাংলাদেশের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা।

বিএনপি দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রুহুল কবির রিজভী অভিযোগ করেছেন, ভারত ইচ্ছাকৃত ভাবে ত্রিপুরার গোমতী নদীর ওপর নির্মিত ডুম্বুর বাঁধের গেট খুলে দিয়েছে, যার কারণে এমন ভয়াবহ বন্যা হয়েছে। তিনি বলেন, ভারত বাংলাদেশের মানুষের কথা চিন্তা করে না।

সোশ্যাল মিডিয়াতেও ভারত বিরোধী ঢেউ

সোশ্যাল মিডিয়াতেও ভারতের বিরুদ্ধে ব্যাপকভাবে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। ভারত জল ছেড়ে বাংলাদেশকে প্লাবিত করেছে দাবি করে বাঁধের পুরনো ভিডিও শেয়ার করা হচ্ছে। শেখ হাসিনাকে অপসারণে ক্ষুব্ধ হওয়ায় ভারত ইচ্ছাকৃত ভাবে বাংলাদেশে জল ছেড়ে দিয়েছে বলে দাবি করে এমন অনেক পোস্ট ভাইরাল হচ্ছে।

ভারত বলেছে- অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে বন্যা হয়েছে

এর পর বৃহস্পতিবার ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতি জারি করে বলেছে, বাংলাদেশে বন্যার জন্য ভারত দায়ী নয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, “বাংলাদেশে একটি গুজব রয়েছে যে বন্যার কারণ হল ত্রিপুরার ডুম্বুর বাঁধের গেট খুলে দেওয়া। এটা সত্য নয়।”

মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত গোমতী নদীর আশপাশের এলাকায় এ বছর সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। এতে উভয় পক্ষের মধ্যে সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। দুই দেশের নদীতে বন্যা একটি সাধারণ সমস্যা, যা উভয় দেশের মানুষকেই মোকাবেলা করতে হয়। এটি মোকাবেলায় উভয় দেশের সহযোগিতা প্রয়োজন।

মন্ত্রণালয় আরও বলেছে যে বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে ডুম্বুর ড্যাম ১২০ কিলোমিটারেরও বেশি দূরে। এটি একটি কম উচ্চতার বাঁধ (প্রায় ৩০ মিটার), যা বিদ্যুৎ উৎপন্ন করে এবং বিদ্যুৎ গ্রিডে যায়। বাংলাদেশও ত্রিপুরা থেকে ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পায়।

৩১ বছর পর এত বৃষ্টি হল ত্রিপুরায়

বিবিসি অনুসারে, বন্যার কারণে ত্রিপুরায় আগস্ট মাসে স্বাভাবিকের চেয়ে ১৫১% বেশি বৃষ্টি হয়েছে। চারদিন ধরে একটানা বৃষ্টি হচ্ছে। এতে সৃষ্ট বন্যায় ১৭ লাখের বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

ত্রিপুরার মন্ত্রী রতন লাল নাথের মতে, গোমতী জেলায় চলতি মাসে ৬৫৬.৬ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এটি স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের চেয়ে ২৩৪% বেশি। ১৯৯৩ সালে, ২১ আগস্ট এক দিনে সর্বোচ্চ ২৪৭ মিমি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছিল। এ বছর ২০ আগস্ট একদিনে ৩৭৫.৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। ভেঙে গেল ৩১ বছরের রেকর্ড।

মন্ত্রী নাথ বলেন, ডুম্বুর বাঁধের গেট খোলার বিষয়ে যা কিছু লেখা ও বলা হচ্ছে তা গুজব। এই বাঁধটি এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যে জল নির্দিষ্ট সীমা ছাড়িয়ে গেলে আপনা থেকেই বেরিয়ে যেতে শুরু করে। বাঁধের কোনো গেট খোলা হয়নি।

Copyright © 2024 NEWS24-BENGALI.COM | All Rights Reserved.

google-news