কলকাতা। আগামী পয়লা মে থেকে সারা দেশব্যাপী শুরু হচ্ছে গণ ভ্যাকসিনেশনের উদ্যোগ। কোভিড ভাইরাসে দ্বিতীয় তরঙ্গ আটকাতে এই গণ ভ্যাকসিনেশন ছাড়া অন্য কোনও রাস্তা খুঁজে পাচ্ছেন না চিকিৎসকেরা। প্রথম পর্যায়ের প্যান্ডেমিকের ঠিক বিপরীত দিকে দাঁড়িয়ে এই পর্যায়ে ভাইরাসের শিকার হচ্ছেন অল্পবয়সী তরুণ ও তরুণীরা৷ আগামী পয়লা মে থেকে যে গণ ভ্যাকসিনেশনের প্রসেস শুরু হতে চলেছে, তার মুখ্য লক্ষ্য হবে এই অংশের মানুষের মধ্যে ভ্যাকসিন পৌঁছে দেওয়া৷ ইতিমধ্যেই কোভিড ভ্যাকসিন নিয়ে নানা রকমের গুজব ছড়িয়েছে। ভ্যাকসিন নেওয়া আদৌ উচিত না কি উচিত নয় তাই নিয়ে তৈরি হয়েছে লাখো বিতর্ক। সামাজিক নেট মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে হাজার বিতর্কও। ১৮ থেকে ৪৫ এই অংশের মানুষদের বিশেষত মহিলাদের ভ্যাকসিন নেবার প্রশ্নে উঠেছে নানা বিতর্ক।
কোভিড টিকার কিছু সাধারণ পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হল – জ্বর, ঠান্ডা লাগা, মাথা ব্যথা, ক্লান্তি, পেশী ব্যথা, ইত্যাদি। ভ্যাকসিন নেওয়ার পরে এই পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াগুলি প্রায় প্রত্যেকের মধ্যেই লক্ষ্য করা গিয়েছে। তবে ভ্যাকসিনের এই কয়েকটি পরিচিত প্রতিক্রিয়া ছাড়াও, এমন কিছু কম পরিচিত সাইড এফেক্টের কথা উঠে এসেছে, যেগুলি কেবলমাত্র মহিলাদের মধ্যেই প্রত্যক্ষ করা গিয়েছে।
সম্প্রতি ভ্যাকসিন নেওয়ার পর মহিলাদের মধ্যে বেশ কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছে। একটি গবেষণা অনুযায়ী, ভ্যাকসিন নেওয়ার পরে মহিলাদের মধ্যে পিরিয়ডের সমস্যা দেখা গিয়েছে। অনেক মহিলাই জানিয়েছেন যে, তাদের পিরিয়ডের সমস্যা হচ্ছে। সমীক্ষা বলছে, মহিলারা পিরিয়ডের সময় কোভিড ভ্যাকসিনের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া অনুভব করতে পারে। টিকা নেওয়ার পরে তাদের অন্যান্য দিনের তুলনায় বেশি ফ্লো হতে পারে। তবে গবেষকদের মতে, এটি ভ্যাকসিনের কোনও পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নয়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ভ্যাকসিনের ডোজ গ্রহণের ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে, যা দেহে উপস্থিত প্লেটলেট ক্লটকে ধ্বংস করে দেয়। এই কারণেই মহিলাদের পিরিয়ডসের সময় হেভি ফ্লো হয়। পেটে ব্যথাও তীব্র হতে পারে এই সময়। তবে সবার ক্ষেত্রে যে এমনটা হবে তা নয়। অনেক মহিলা জানিয়েছেন যে, ভ্যাকসিনের পর তাদের ঋতুস্রাবের সময়ও পরিবর্তন হয়েছে। বিজ্ঞানীদের গবেষণা অনুসারে, টিকার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া প্রায় সকলেরই হতে পারে, তবে পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের মধ্যে একটু বেশি দেখা যায়।
সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় ঋতুস্রাব সম্পর্কিত কয়েকটি প্রশ্ন ঘোরাফেরা করছিল। ঋতুস্রাব চলাকালীন কি কোভিড ভ্যাকসিন নেওয়া যাবে? নিলে ঋতুস্রাবের উপর কোনও প্রভাব পড়বে না তো? গত কয়েক দিন ধরেই এই নিয়ে নানা পোস্ট সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরছে। যেখানে বলা হচ্ছে যে, মহিলাদের পিরিয়ড হওয়ার পাঁচ দিন আগে এবং পাঁচ দিন পরে করোনা টিকা গ্রহণ করা উচিত নয়। ওই পোস্ট আরও দাবি করা হয়েছে যে, মহিলাদের সেই সময় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে। তাই কোভিড ভ্যাকসিন নিলে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। নেট মাধ্যমে এই তথ্য ছড়াতেই রীতিমত শোরগোল পড়ে গিয়েছে।
বিষয়টি নজরে আসতেই ওই তথ্যকে ‘ভুয়ো’ বলে প্রেস ইনফরমেশন ব্যুরো-র তরফে লিখিত বিবৃতি জারি করা হয়। সেখানে বলা হয়েছে, ‘ঋতুচক্রের পাঁচ দিন আগে ও পরে মহিলাদের টিকা নেওয়া উচিত নয় বলে সোশ্যাল মিডিয়ায় যে তথ্য ঘুরে বেড়াচ্ছে, তা একেবারেই ভুয়ো। গুজবে কান দেবেন না। ১৮ বছরের উপরে থাকা সমস্ত ব্যক্তির উচিত ১ মে-র পরে ভ্যাকসিন নেওয়া।’ চিকিৎসক ও গবেষকরাও এই একই কথাই বলছেন। তাঁদের মতে, ভ্যাকসিনের সঙ্গে পিরিয়ডের কোনও সম্পর্ক নেই।
আসুন দেখে নেওয়া যাক
ঋতুস্রাব চলাকালীন কি ভ্যাকসিন নেওয়া উচিত?
ঋতুস্রাব চলাকালীন শরীরে হরমোনজনিত নানা ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়ে থাকে। কিন্তু শরীরের যে অনাক্রম্যতা বা ইমিউনিটি তা বহু বছরের ফল। একদিনে গড়ে ওঠে না বা নষ্ট হয় না। অতএব ঋতুস্রাব চলাকালীন ভ্যাকসিন নিতে কোনও সমস্যা নেই।
ঋতুস্রাব চলাকালীন তলপেটে যন্ত্রণা হয়ে থাকে। ভ্যাকসিন নিলে কি সেই যন্ত্রণা বাড়বে?
যে কোনও ভ্যাক্সিনেরই কিছু সাইড-এফেক্ট থেকে যায়। ভ্যাকসিনের ফলে গায়ে হাতে পায়ে ব্যথা হওয়া, হালকা জ্বর আসা কিংবা মাথা ধরার সমস্যা থাকে। সেটা শুধু ঋতুস্রাব নয়, যে কোনও সময় হতে পারে। তাই ঋতুস্রাবের ক্ষেত্রে আলাদা কোনও প্রভাব হবে না৷ ঋতুস্রাব চলাকালীন ভ্যাকসিন নিলে, প্রচুর পরিমাণে জল খাওয়া, শরীরকে বিশ্রাম দেওয়া কিংবা ডাক্তারের পরামর্শে প্যারাসিটামল নেওয়ার দিকে নজর দেওয়া যেতে পারে।
ঋতুস্রাব চলাকালীন শারীরিক ক্লান্তি কি ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রে বাড়তে পারে?
ঋতুস্রাব চলাকালীন রক্তচাপ নিচের দিকে থাকে। রক্তচাপের সমস্যার জন্য প্রচুর পরিমাণে জল খাওয়া, এনার্জি ড্রিংকের সাহায্য নেওয়া যেতে পারে। ভ্যাকসিন নেওয়ার সময় ভরা পেটে নেওয়া প্রয়োজন।
ভ্যাকসিন কি প্রজনন ক্ষমতায় প্রভাব ফেলতে পারে?
যে কোনও মহিলার প্রজনন ক্ষমতা তার ওভারি, ইউটেরাস অথবা নানা রকম হরমোনের উপরে নির্ভরশীল। করোনা কেন, কোনও ভ্যাকসিনই সেখানে প্রভাব ফেলতে পারে না। অতএব ভ্যাকসিন নেওয়া যায় নির্দ্বিধায়।
ভ্যাকসিন নেওয়ার কত দিনের মধ্যে বাচ্চার জন্য পরিকল্পনা করা উচিত?
সাধারণত করোনা ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ নেওয়ার ছয় থেকে আট সপ্তাহের মধ্যে দ্বিতীয় ডোজ নেওয়া দরকার। তার পর বাচ্চার পরিকল্পনা করা উচিত।
গর্ভাবস্থায় কি ভ্যাকসিন নেওয়া উচিত?
ভ্যাকসিনের কোনও রকম সাইড এফেক্ট নেই, যা গর্ভাবস্থায় একজন মহিলার শরীরে প্রভাব ফেলতে পারে। অতএব গর্ভাবস্থায় ভ্যাকসিনেশনে সমস্যা নেই।
ভ্যাকসিন নেওয়ার পর গর্ভবতী হলে আলাদা করে কিছু করার দরকার আছে?
না, ভ্যাকসিনেশনের পর গর্ভবতী হলে আলাদা করে কিছু করার নেই।
ভ্যাকসিন কি বুকের দুধ খাওয়ানোর ক্ষেত্রে কোনও প্রভাব ফেলতে পারে?
ভ্যাকসিনেশনের ফলে মহিলাদের শরীরে যে আ্যান্টিবডি তৈরি হয়, তা বুকের দুধের মধ্যে দিয়ে বাচ্চার শরীরে প্রবেশ করে৷ অতএব ভ্যাকসিনেশনের ফলে মা ও বাচ্চা উভয়ই সুরক্ষিত থাকতে পারে।
পিসিওডি থাকলে কি ভ্যাকসিন নেওয়া উচিত?
পিসিওডি থাকলেও ভ্যাকসিন নেওয়া উচিত। সেক্ষেত্রে যদিও শারীরিক ওজনবৃদ্ধি, সুগারের সমস্যা প্রভৃতি দেখা দিতে পারে৷ যদিও তা আপৎকালীন।
কোভ্যাকসিন না কোভিশিল্ড কোন টিকাটি নেবেন? খুটি নাটি যেনে নিন
নিউ ইয়র্ক টাইমস পত্রিকার একটি প্রতিবেদনে, ইয়েল স্কুল অব মেডিসিন-এ কর্মরত অ্যালিস লু-কালিগান এবং র্যান্ডি এপস্টিন-ও একই কথা বলেছেন। তাঁরা জানিয়েছেন, এখনও পর্যন্ত এমন কোনও তথ্য হাতে আসেনি, যা প্রমাণ করে করোনা প্রতিষেধকের সঙ্গে ঋতুস্রাবের কোনও সংযোগ রয়েছে। আর কোনও সংযোগ থাকলেও, এক বার অনিয়মিত ঋতুস্রাবে দুঃশ্চিন্তা করার কিছু নেই।
