ওয়েব ডেস্ক: সংযুক্ত মোর্চা নিয়ে আগেই আপত্তি ছিল অধীরের। একুশের নির্বাচনের ফলাফলে দেখা গিয়েছে কংগ্রেসের পকেট খালি। তারা একটিও আসন পায়নি। দলের অন্দরে আইএসএফ–কে নিয়ে গোল বেঁধেছে। এই অবস্থায় ভবিষ্যৎ নিয়ে ধোঁয়াশা বাড়ালেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। বললেন, ”বিধানসভা ভোটে জোট করে লড়াই করেছি। সামনের পুরনির্বাচনে জোট করে লড়াই করব কিনা, সেই আলোচনা হয়নি। স্বাভাবিকভাবে জোটের ভবিষ্যৎ নিয়ে এখনই নিশ্চিত করে কিছু বলার ক্ষমতা আমার নেই।” যদিও জোট ধরে রাখতে আগ্রহী সিপিএম (CPM)। ভাঙার দায় এড়াতে চাইছে নারাজ নেতৃত্ব। সূর্যকান্ত মিশ্র স্পষ্ট করে দিয়েছেন, তাঁরা জোট ছাড়ছেন না। কেউ নিজের মতো সিদ্ধান্ত নিতেই পারেন। শনিবার আলিমুদ্দিনে রাজ্য কমিটির বৈঠকে জোট নিয়ে প্রশ্ন উঠলে তিনি সাফ জানিয়ে দেন, এসব নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে আসন্ন উপনির্বাচনের প্রস্তুতি নিক জেলা কমিটিগুলি।
তাহলে ষোলোর পথেই কি একুশ? ২০১৬ সালে সমঝোতা হয়েছিল বাম-কংগ্রেসের। কিন্তু ভোটের পর আর একসঙ্গে দেখা যায়নি বাম-কংগ্রেস নেতৃত্বকে। ২০১৯ সালে লোকসভা ভোটের আগে জোট হব হব করেও শেষপর্যন্ত হয়ে ওঠেনি। একুশের বিধানসভা নির্বাচনে কয়েক দফায় আলোচনার পর জোট করেছিল বাম ও কংগ্রেস। সেই জোটে যোগ দেয় ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট। নাম দেওয়া ছিল ‘সংযুক্ত মোর্চা’। এত আলাপের পরেও ব্রিগেড সমাবেশে অধীরের অসন্তোষ বিড়ম্বনায় ফেলেছিল বাম নেতৃত্বকে। আইএসএফের একটি আসন বাদ দিলে, ভোটের ফলে বাম-কংগ্রেস শূন্য।
শনিবার জেলার নেতাদের সঙ্গে প্রদেশ নেতৃত্বের পর্যালোচনা বৈঠকে জোটের যৌক্তিকতা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। জেলার নেতাদের কড়া প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে প্রদেশ নেতৃত্বকে। জোট করে কি লাভ হয়েছে, প্রশ্ন তোলেন একাধিক কংগ্রেস নেতা। তার পর সাংবাদিক বৈঠকে আইএসএফ নিয়ে নিজের আপত্তির কথা গোপন করেননি অধীর । স্পষ্টই করলেন, জোটে আইএসএফ থাকায় প্রশ্নের মুখে পড়েছে সংযুক্ত মোর্চার ভাবমূর্তি। প্রকারান্তরে সিপিএমকেই কাঠগড়ায় তুলেছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি। তিনি বলেন,”কংগ্রেসের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের মতামত নিয়ে জোট করেছি। হয়তো সেই জোট নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছিল। কারণ মাঝখানে আইএসএফ ঢুকে জোটের স্বচ্ছ ভাবমূর্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলে দেয়। স্বাভাবিক নতুন করে জোট করতে গেলে সেই সব প্রশ্নের সমাধান দরকার। আমরা জোটে নেই, আছি দুটোর কোনওটাই বলা যাবে না।” তবে বিতর্ক ধামাচাপা দিতে দলের অন্দরে অধীর চৌধুরী জানান, বামেদের সঙ্গে জোট করার ফলেই ভরাডুবি হয়েছে, এমন কোনও বাস্তব তথ্যপ্রমাণ নেই।
BJP কে ঠেকাতে এবার CPM এর ভোট TMC তে গেছে, কার্যত শিকার করলেন সূর্যকান্ত মিশ্র
এদিকে বামেদের কোথাই ২০১৬ সালের নির্বাচনে অনেক জায়গাতেই কংগ্রেস সমর্থকরা যেহেতু বামেদের ভোট দেয়নি, তাই এবার প্রতিষেধ নিতেই তৃণমূল কংগ্রেসকে ভোট দিয়েছে বলে বামেরা বলে রিপোর্টে উঠেও এসেছে। জোট নিয়ে প্রশ্ন ওঠে সিপিআইএমের(CPM) রাজ্য কমিটির বৈঠকেও। সেখানে কেন্দ্রীয় নেতাদের বক্তব্য, দায় চাপানোর বদলে আত্মবিশ্লেষণ করুন সূর্যকান্ত মিশ্র–বিমান বসুরা। জোট নিয়ে সিপিআইএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রের বক্তব্য, ‘আমরা জোট ছাড়ছি না। কেউ যদি অন্য সিদ্ধান্ত নেন, তাহলে নিতেই পারেন।’ তাঁদের পর্যালোচনা বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, সাংগঠনিক দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে না পারলে ভরাডুবি রোখা যাবে না। পশ্চিম বর্ধমান ও কলকাতা ছাড়া বাকি সব জেলাই জোট টিকিয়ে রাখার পক্ষে মতামত দেয় বলে আলিমুদ্দিন সূত্রে খবর। কংগ্রেসের সঙ্গে জোট থাকবে কিনা তা ভবিষ্যৎ বলবে। তার আগে আগামীদিন রাজ্যের উপনির্বাচন ও পুর ভোটের প্রস্তুতি সেরে রাখার নির্দেশ দিল আলিমুদ্দিন।