ওয়েব ডেস্ক: এইদিন সন্ধ্যাই ফেসবুক লাইভে এসে জনসাধারণের উদ্দেশে বক্তব্য রাখেন রাজ্য সম্পাদক Surjya Kanta Mishra। সেখানে তিনি কার্যত শিকার করলেন যে তাদের বিজেপি বিরোধী নির্বাচনী প্রচারে ঘাটটির কথা। এ বার দলের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র সরাসরি স্বীকার করে নিলেন, ‘বিজেমূল’-এর মতো স্লোগান ব্যবহার করা ভুল হয়েছিল। বিজেপি ও তৃণমূলের মধ্যে বোঝাপড়া বোঝাতে সভা-সমাবেশে এমন কিছু কথা ও স্লোগান সিপিএমের বিভিন্ন স্তরের নেতৃত্বের মুখে শোনা গিয়েছিল, যার সঙ্গে বাস্তব পরিস্থিতির যোগ নেই। বরং, ওই ধরনের প্রচার ‘জনমানসে’ বিভ্রান্তি তৈরি করেছিল। তার পাশাপাশিই সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকের বক্তব্য, প্রতিষ্ঠান-বিরোধিতার ধাক্কা সামাল দিতে শাসক দল তথা রাজ্য সরকার যে সব কর্মসূচি নিয়েছিল, সেগুলোকেও তাঁরা ‘ছোট’ করে দেখে ভুল করেছেন।
এইবার প্রথম রাজ্য বিধানসভা বাম কংগ্রেস শূন্য। তার পর থেকেই চলছে বিপর্যয়ের ময়না-তদন্ত। নির্বাচনী ফলাফল এবং তার পরবর্তী সময়ে দলের কর্তব্য বিষয়ে বুধবার সন্ধ্যায় সিপিএম কর্মীদের উদ্দেশে সামাজিক মাধ্যমে সরাসরি বক্তৃতা করেছেন সূর্যবাবু। সেখানেই উঠে এসেছে একগুচ্ছ ভুলের স্বীকারোক্তি। ওই বক্তৃতায় সূর্যবাবু ফের বলেছেন, দেশের পরিস্থিতির নিরিখে বিজেপিই তাঁদের কাছে প্রধান শত্রু। বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই চলছে, তা আরও তীব্র হবে। তবে তৃণমূল ভোটে জিতে গিয়েছে বলেই তাদের সব অন্যায় শুদ্ধ হয়ে গিয়েছে, এমন নয়। তৃণমূলের অন্যায় বা জন-বিরোধী পদক্ষেপের বিরুদ্ধেও বিরোধী দল হিসেবে সরব হবেন তাঁরা। এই সূত্রেই সূর্যবাবুর ব্যাখ্যা, ২০১৪ বা ২০১৬ সালে অনেক ক্ষেত্রেই কেন্দ্র ও রাজ্যের শাসক দলের ‘বোঝাপড়া’ স্পষ্ট ছিল। কিন্তু ২০১৯ সাল থেকে পরিস্থিতির অনেক বদল হয়ে গিয়েছে। তৃণমূল যখন বিজেপির সর্বাত্মক বিরোধিতায় সরব, সেই সময়ে বামেদের মঞ্চ থেকে পুরনো ধারণার ভিত্তিতে ‘বিজেমূল’ জাতীয় আক্রমণ মানুষের অভিজ্ঞতার সঙ্গে মেলেনি। আখেরে লাভবান হয়েছে তৃণমূলই। তবে সূর্যবাবু মনে করিয়ে দিয়েছেন, বিজেপি এবং তৃণমূলের সব চেয়ে বড় মিল— দুই দলই আদ্যন্ত কমিউনিস্ট-বিরোধী!
এখন সাধারণ মানুষের দুয়ারে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সিপিআইএম নেতারা। তবে সেটা নির্বাচনী বিপর্যয়ের কারণ জানতে। পার্টি সদস্যদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের কাছ থেকে যুক্তি ও পরামর্শ চাওয়া হয়েছে। প্রতিদিনই কাড়ি কাড়ি চিঠি জমা হচ্ছে আলিমুদ্দিনে। সেই চিঠির বড় অংশই নেতৃত্ব পড়ছে বলে জানান CPM রাজ্য সম্পাদক। অপাঠ্য অনেক চিঠি আসছে। যেখানে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজও করা হচ্ছে। তবে সব চিঠি পড়ার পাশাপাশি যুক্তিও যে গ্রহণ করা হবে না, এদিন তা স্পষ্ট জানিয়ে দেন সূর্যকান্ত। এইসব করতে গেলে এগিয়ে যাওয়ার বদলে পার্টির কাজকর্ম থমকে থাকবে। তাই যতটা সম্ভব গ্রহণ করে আগামী দিনের পথের সন্ধানে নামতে হবে বলে জানান তিনি।
রাজ্যবাসীর সঙ্গে প্রতারণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী, বললেন মীনাক্ষী
টানা ১০ বছর সরকার চালিয়েও তৃণমূল যে ভাবে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে তৃতীয় বারের জন্য ফিরে এসেছে, তা নিয়ে নানা চর্চা হচ্ছে। এই প্রসঙ্গে সূর্যবাবুর মত, প্রতিষ্ঠান-বিরোধিতা এবং মানুষের নানা ক্ষোভ সামাল দেওয়ার জন্য রাজ্য সরকার কিছু জনমুখী প্রকল্প ঘোষণা করেছিল, শাসক দল ‘দিদিকে বলো’র মতো কিছু কর্মসূচি নিয়েছিল। এগুলো শাসক পক্ষের তরফে ‘ইতিবাচক হস্তক্ষেপ’। কিন্তু তাঁরা এই ধরনের কর্মসূচিকে ‘ছোট’ করে দেখেছেন। ভোটের সময়ে পায়ে আঘাত পেয়ে হুইলচেয়ারে বসা মুখ্যমন্ত্রী কি ভাবে বিজেপির মোকাবিলা করবেন— এই প্রশ্ন তোলাও মানুষ ভাল ভাবে নেননি বলে কবুল করে নিয়েছেন সূর্যবাবু।
জোটে নিয়ায়ে বার্তা দিতে গিয়ে এইদিন সূর্যবাবু বলেছেন, সংযুক্ত মোর্চা থাকবে কি না, তা তাঁদের হাতে নেই। তাঁরা জোট ভাঙতে চান না। মোর্চার বাকি শরিকেরা কি চাইবে, তার উপরে মোর্চার ভবিষ্যৎ নির্ভর করবে, কারণ সকল কে নিয়েই জোট।