Table of Contents
ওয়েব ডেস্ক: এ যেন স্পেশাল ২৬ মুভির গল্প বাস্তবে। কীভাবে প্রতারণার চালাতো দেবাঞ্জন দেব। কসবা ভুয়ো ভ্যাকসিন কাণ্ডে প্রকাশ্যে এলো চাঞ্চল্যকর তথ্য। ঘটনাটির সূত্রপাত হই গত ২২ জুন। কসবায় যে রমরমিয়ে তখন চলছে ভুয়ো টিকাকেন্দ্র, ওইদিনই বিষয়টি প্রথম নজরে আসে পুলিশের। লালবাজার সূত্রে জানা গিয়েছে, তারপরেই ঘটনাস্থলে যাই পুলিশ, তাকে জিজ্ঞশাবাদ করে, তাঁর কথায় একাধিক অসংগতি থাকায় পুলিশ কর্মীদের মনে সন্দেহ হই, পরে আটক করা হয় ভুয়ো IAS-কে। ঘটনায় স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করে পুলিশ। এরপরেই গ্রেফতার করা হয় দেবাঞ্জনকে।
এর পর ওই ঘটনার তদন্ত ভার দেওয়া হই কলকাতা পুলিশ এর গোয়েন্দা বিভাগ কে। তারা ধীরে ধীরে টিকা বিভ্রাটের জট ছাড়াতে শুরু করেছে পুলিশ। ধৃতকে জেরা করে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসছে।
অপারেশন ভুয়ো টিকাকরণের সূত্রপাত কীভাবে হয়েছিল
জানা গিয়েছে, হটাত করে ভুয়ো IAS হয়ে ওঠেনি দেবাঞ্জন। এর জন্য বেশ পরিকল্পনা করেই এগিয়েছিল সে। তাকে জেরা করে তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, ঘটনার সূত্রপাত ২০১৮ সালে। নিজের বাবাকে প্রথম মিথ্যেটা বলেছিল যে IAS অফিসার পদে নিযুক্ত হয়েছে। তবে ওই সময় বাইরে কারোকে তার এই IAS হওয়ার কথা কাওকে বলেনি সে। সেইসময় সে মিউজিক অ্যালবাম, তথ্যচিত্র বানানোর পাশাপাশি ছোটখাটো ব্যবসা করত। লকডাউন চলাকালীন মাস্ক এবং স্যানিটাইজারের চাহিদা বাড়ায় সে সেই ব্যবসায় মন দিয়েছিল। বাগড়ি মার্কেট এবং মেহতা বিল্ডিং থেকে ৩ লাখ টাকার মাস্ক, স্যানিটাইজার, PPE কিট কিনে নেয় সে। তালতলায় ভাড়া নেয় গোডাউন। প্রায় দ্বিগুণ মূল্যে ওই সামগ্রী বিক্রি করে। লাভের অঙ্কটাও ছিল অনেক।
পুলিশকে দেওয়া দেবাঞ্জনের বয়ান অনুযায়ী, সে সামাজিক কাজ করতে চেয়েছিল। সেইজন্য প্রথমে ছোট ছোট ক্লাবগুলিকে অর্থ সাহায্য করে রক্তদান শিবির বা কমিউনিটি কিচেনের জন্য। এতে কিছুটা জনপ্রিয়তা পায় সে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এরপর কিছু স্থানীয় রাজনৈতিক নেতার আয়োজন করা অনুষ্ঠানে যেতে শুরু করে সে। সেখানে পুলিশ কিংবা রাজনৈতিকদের সঙ্গে সৌজন্য বিনিময়ের সময় যোগাযোগ হয়। এইভাবেই রাজনৈতিক জগতের মানুষের সাথে তার পরিচয় বাড়তে থাকে। এরই মাঝে ‘ফিনকর’ নামে এক কোম্পানিও তৈরি করে ফেলে সে।
অন্যদিকে, এক NGO-ও খুলে ফেলে সে। গোয়েন্দারা জানাচ্ছেন, টিকাকেন্দ্রের মতো ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাও ভুয়ো। তার কোনও রেজিস্ট্রেশন হয়নি। এদিকে ওই ভুয়ো সংস্থায় ১৪ জন কর্মচারী নিয়োগ করে সে। তার হাত যে অনেক উঁচু অবধি রয়েছে এই বিষয়টি বারবার সকলকে বোঝানোর চেষ্টা করেছিল সে। জানা গিয়েছে, মাস চারেক আগে সে নিজেকে পুরসভার যুগ্ম আধিকারিক হিসেবে পরিচয় দিতে শুরু করে।
জাল টিকা কাণ্ডে সিবিআই-তদন্ত চেয়ে এবার হাইকোর্টে দায়ের জনস্বার্থ মামলা
কিন্তু হঠাৎ করে ভুয়ো টিকাদান কেন?
পুলিশ সূত্রে খবর, করোনা সংক্রমণ বাড়ছে। টিকাও প্রায় অমিল। সেই কারণে দেবাঞ্জনের কর্মচারীরা ওয়ার্ক ফ্রম হোমের দাবি তোলে। সেই সময় সে তাদের টিকার ব্যবস্থা করে দেয়। টিকার সংকটেও যে সে টিকার ব্যবস্থা করে দিতে পারে, এ কথা চাউর হতে বেশি সময় লাগেনি। অনেকেই তার শরণাপন্ন হয়। দেবাঞ্জন পুলিশকে জানিয়েছে যে সে নিজেকে প্রমাণ করার জন্য আরও টিকার বন্দোবস্ত করে। সেই থেকেই সূত্রপাত। এরপর সাধারণ মানুষের জন্যই নাকি সে ওই টিকা জোগাড় করে দেয়।
আদৌ ভ্যাকসিন ব্যবহার করা হত টিকা কেন্দ্রে?
ধৃতের বয়ান অনুযায়ী সে আসল ভ্যাকসিনই ব্যবহার করেছে। কিন্তু তাহলে রেজিস্ট্রেশনের কাগজ কেন এলো না? সে প্রসঙ্গে নাকি অভিযুক্ত কোনও সদুত্তর দিতে পারেনি। যদিও তার অফিসে হানা দিয়ে পুলিশ একাধিক অ্যামিকেসিনের ভায়াল এবং কোভিশিল্ডের ভুয়ো লেবেল পেয়েছে।
তদন্তকারীদের দাবি, সম্ভবত সে আসল টিকা ব্যবহার করেনি। এবারে প্রশ্ন, যদি ধৃতের বয়ান সত্যি হয় তাহলে কোথা থেকে সে এত ভ্যাকসিন পেল?
কংগ্রেসকে বাদ দিয়ে বিজেপি বিরোধী কোনও মঞ্চ সম্ভব নয়, বললেন শরদ পওয়ার
মোট ক’টি টিকাকেন্দ্র চালাচ্ছিল দেবাঞ্জন?
গোয়েন্দারা জানাচ্ছেন, আপাতত কলকাতায় সিটি কলেজ এবং কসবাতেই ওই টিকাকেন্দ্র চালাচ্ছিল সে। সূত্রের খবর, সিটি কলেজে ৭২ জন এবং কসবায় ৫১৫ জনকে টিকা দেওয়া হয়। তবে ওই সংখ্যা বাড়তে পারে।
পুলিশের দাবি, সকল টিকা গ্রহীতাকে খুঁজে বের করা এখনও সম্ভব হয়নি। তবে যাঁদের পাওয়া হয়েছে, তাঁদের দেহে এখনও কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়নি।