বিধান পরিষদ প্রস্তাব পাশ বিধানসভায়, ‘শূন্য’ সিপিএম-কংগ্রেসকে কি সেখানে স্থান দিতে চান মমতা

by Chhanda Basak

ওয়েব ডেস্ক: ভোটের আগেই রাজ্যে বিধান পরিষদ গঠনের কথা ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই মতো মঙ্গলবার বিধানসভায় বিধান পরিষদ গঠনের প্রস্তাব পাশ হয়ে যায় বিপুল ভোটের ফারাকে। ভোটাভুটি শুরু হলে, বিধান পরিষদ গঠনের পক্ষে মত দেন ১৯৬ জন। বিপক্ষে মত দেন ৬৯ জন। তবে বিধানসভায় পাশ হয়ে গেলেও, বিধান পরিষদ গঠনের জন্য রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের সিলমোহর দরকার। সেখান থেকে কেন্দ্রীয় আইন মন্ত্রক ঘুরে লোকসভা এবং রাজ্যসভা, সংসদের দু’কক্ষেই প্রস্তাবটি পাশ করাতে হবে। তার পর চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষর লাগবে। তবেই এ রাজ্যে রাজ্যে বিধান পরিষদ চালু হবে।

বিধান পরিষদ প্রস্তাব পাশ বিধানসভায়, ‘শূন্য’ সিপিএম-কংগ্রেসকে কি সেখানে স্থান দিতে চান মমতা

কিন্তু নির্বাচনের আগে বিধান পরিষদ গঠনের যতটা সক্রিয়তা শাসকদলের পক্ষ থেকে দেখানো হচ্ছিল, ভোটের ফলাফল প্রকাশের পর তা কিঞ্চিৎ বৃদ্ধি পেয়েছে। কী কারণে? রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের মতে, বিধানসভায় বাম এবং কংগ্রেসের অনুপস্থিতিই পরোক্ষে তৃণমূলের বিধান পরিষদ গঠনের তাগিদ বাড়িয়েছে।

সংসদের মতো রাজ্যের আইনসভাও দ্বিকক্ষবিশিষ্ট হতে পারে। সে ক্ষেত্রে উচ্চকক্ষটি বিধান পরিষদ এবং নিম্নকক্ষটি বিধানসভা হিসেবে পরিগণিত হয়। উত্তরপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, কর্নাটক, বিহার, অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলঙ্গানা এবং জম্মু-কাশ্মীরে এই দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভা রয়েছে। ১৯৫২ সালের ৫ জুন ৫১ জন সদস্যকে নিয়ে বাংলাতেও বিধান পরিষদ গঠিত হয়। কিন্তু ১৯৬৯ সালের ২১ মার্চ তার অবলুপ্তি ঘটে। সেই থেকে শুধুমাত্র বিধানসভার মাধ্যমেই শাসনকার্য পরিচালিত হয়ে আসছে রাজ্যে। ২০১১ সালে ক্ষমতায় এসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ফের বিধান পরিষদ গঠনের দাবি তুলেছিলেন। কিন্তু কাজ এগোয়নি।

কিন্তু এ নিয়ে তর্কবিতর্ক চলাকালীন আপত্তি তোলেন শিলিগুড়ির বিজেপি বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ। তিনি বলেন, ‘‘বিধায়কদের উপর কি ভরসা নেই? ’’ একে কোটি কোটি টাকার দেনা, তার উপর কোভিডের প্রকোপ, এমন সময় বিধান পরিষদ গঠন করে বাড়তি খরচের কী প্রয়োজন, প্রশ্ন তোলেন তিনি। বিধান পরিষদ গঠন করতে প্রায় ১০০ কোটি টাকা খরচ হবে বলে যুক্তি দেন কোচবিহার দক্ষিণের বিজেপি বিধায়ক মিহির গোস্বামীও।

এবার কলকাতা থেকে ধৃত আরেক CBI অফিসার, এবার ভুয়ো CBI আধিকারিকের সঙ্গে রুদ্রনীল!

কিন্তু বিধানসভার উপ মুখ্য সচেতক তথা প্রবীণ তৃণমূল বিধায়ক তাপস রায় বলেন, ‘‘বিধান পরিষদের গুরুত্ব কী, অনেকেই তা বোঝেন না। বিধানসভায় বাম ও কংগ্রেস শূন্য। গণতন্ত্রের পক্ষে তা শুভ নয়। এক ব্যক্তি, এক নেতা পদ্ধতি সমর্থনযোগ্য নয়।’’ কিন্তু বিজেপি বিধায়করা চেঁচামেচি শুরু করলে, তাঁদের সামাল দিতে ফের এগিয়ে আসেন তাপস। তিনি বলেন, ‘‘স্মৃতি ইরানি উচ্চ মাধ্যমিক পাশ। তাঁকে শিক্ষা মন্ত্রী করেছিলেন নরেন্দ্র মোদী। প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা নিয়েই প্রশ্ন রয়েছে। তাহলে রাজ্যসভা তুলে দেওয়া হোক। নিজেদের রাজ্যে বিধান পরিষদ থাকবে। অথচ বাংলায় থাকবে না। সংসদ বলতে যেমন দুই কক্ষ বোঝায়, তেমনই বিধান পরিষদ ছাড়া রাজ্য অসম্পূর্ণ।’’

এ ব্যাপারে বিজেপি বিধায়কদের সঙ্গে একমত পোষণ করতে দেখা যায় সংযুক্ত মোর্চা সমর্থিত ইন্ডিয়ান সেক্যুলার ফ্রন্টের বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকি। তিনি বলেন, ‘‘তাহলে এত দিন কি বিধান পরিষদ ছাড়া রাজ্য অসম্পূর্ণ ছিল? তাহলে তা স্বীকার করুম তাপস রায়। আমি নিজে বিধান পরিষদের বিপক্ষে। বিধান পরিষদ গঠন সাদা হাতি পোষার সমান।

এর পাল্টা পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বিধান পরিষদ কী সংবিধান বহির্ভূত? বিরোধী দলের কাউকেও তো তা বলতে শুনলাম না। মিহিরবাবু আগে এ দিকে বসতেন। এখন ও দিকে গিয়ে বেশি চিৎকার করছেন। রাজ্যের অর্থনীতি নিয়ে অনেক কথা বলছেন। দেশের অর্থনীতি নিয়ে কোনও কথা নেই কেন? সংখ্যার নিরিখে যদি বিচার হয়, লে ক্ষেত্রে উত্তরপ্রদেশ, কর্নাটকে বিধান পরিষদ বন্ধ করা হচ্ছে না কেন? সংবিধানের বাইরে গিয়ে তো কিছু করা হচ্ছে না। তাহলে এত প্রশ্ন কেন?’’

এবার রাজ্যে পালিত হবে ‘খেলা হবে দিবস’, বিধানসভায় ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর

পার্থ আরও বলেন, ‘‘বিধানসভায় হেরে রাজ্যসভায় যাচ্ছেন, এমন ভূরি ভূরি উদাহরণ আছে। সিপিএম এবং কংগ্রেসের সঙ্গে বিরোধিতা থাকতে পারে। কিন্তু তাদের শূন্য হওয়াটা গণতন্ত্রের পক্ষে শুভ নয়। রাজ্যের জন্য কিছু করতে গেলে সংসদের জোর দেখিয়ে আটকে দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে। বিরোধী বিধায়ক বলছেন, লোকসভায় আটকে দেবেন। রাজনীতি করব, অথচ বাংলার কথা ভাবন না, এটা হতে পারে না।’’

ঠিক এখানেই ওয়াকিবহাল মহলের একাংশের জিজ্ঞাস্য, তবে কি বিধানসভায় বাম-কংগ্রেসের উপস্থিতি নিশ্চিত করতেই বিধান পরিষদ গঠনে সক্রিয় হয়েছে শাসকদল? সিপিআইএম রাজ্য কমিটির সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র এই নিয়ে একটি লিখিত বিবৃতি জানিয়েছেন, “আঞ্চলিক প্রতিনিধিত্ব সুনিশ্চিত করতে জাতীয় স্তরে আইনসভার উচ্চকক্ষ বা রাজ্যসভা থাকার দরকার আছে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে রাজ্যস্তরে আইনসভার উচ্চকক্ষের কোনও প্রয়োজনীয়তা নেই।”

রেড ভলান্টিয়ার্সদের ভূমিকা নিয়ে বিধানসভাই একাই সরব সংযুক্ত মোর্চার একমাত্র বিধায়ক Naushad Siddiqui

এই বক্তব্যের নেপথ্যে সূর্যকান্ত মিশ্রের যুক্তি, অতীতে পশ্চিমবঙ্গের আইনসভার কার্যপ্রণালীতে বিধান পরিষদের কোনও কার্যকরী ভূমিকা ছিল না। “১৯৫২ থেকে পরবর্তী ১৭ বছরে পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভায় ৪৩৬টি বিল পাস হয়েছিল, তার মধ্যে মাত্র দুটি বিল সংশোধিত হয় বিধান পরিষদে,” একটি বিবৃতি দিয়ে লেখেন সূর্যবাবু। এর পাশাপাশি বর্তমান অতিমারি পরিস্থিতিতে বিধান পরিষদ গঠনে অতিরিক্ত খরচের বোঝা কীভাবে রাজ্য টানবে, সেই প্রশ্নও তিনি তুলে দিয়েছেন। ঠিক যে যুক্তি দেখিয়ে মঙ্গলবার এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করেন শুভেন্দু।

বিধানপরিসধ নিয়ে পার্থর যুক্তির সম্পূর্ণ বিরধিতা করে প্রশ্ন তলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। বিধানসভা থেকে বেরিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করে তিনি বলেন, ‘‘বিধান পরিষদ গঠন করলে অর্থের অপচয় হবে। ৫ বছরে ৬০০ থেকে ৮০০ কোটি টাকা খরচ হবে। শাসকদল ঘনিষ্ঠ যাঁরা জিততে পারেননি, পিছনের দরজা দিয়ে তাঁদের জায়গা করে দিতেই বিধান পরিষদ চালুর চেষ্টা।’’ তিনি আরও বলেন বিধান পরিষদ নিয়ে মাতামাতির আগে সরকারি কর্মীদের ডিএ, ৪০ লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিকের ভবিষ্যৎ এবং এসএসসি-টেট দুর্নীতি আটকানোর কথা রাজ্যের ভাবা উচিত।

google-news
NEWS24-BENGALI.COM

NEWS24-BENGALI.COM brings to provide the latest quality Bengali News(বাংলা খবর, Bangla News) on Crime, Politics, Sports, Business, Health, Tech, and more on Digital Platform.

Copyright © 2024 NEWS24-BENGALI.COM | All Rights Reserved.