কলকাতা। করোনাকালে ‘দুয়ারে রেশন’। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) ঘোষণা মতো গ্রাহকদের দুয়ারে রেশন পৌঁছে দিতে এবার জোর কদমে নেমে পড়ল রাজ্য খাদ্য দপ্তর। কোন পথে দুয়ারে রেশন প্রকল্পের (Ration) বাস্তবায়ন হবে, তা নিয়ে খোঁজখবর শুরু করেছেন খাদ্য দপ্তরের কর্তারা। তাঁরা ধরে নিয়েছেন, এই প্রকল্প রূপায়ণের ক্ষেত্রে সব চেয়ে বেশি বাধা আসতে পারে রেশন ডিলারদের কাছ থেকে।
তাই, রেশন ডিলার সংগঠনের প্রতিনিধিদের কাছ থেকে এই ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব চাওয়া হয়েছে। অন্যান্য রাজ্যে কি ভাবে দুয়ারে রেশন প্রকল্প চলছে, সেই বিষয়েও খবর নেওয়া হচ্ছে। সব পক্ষের সঙ্গে কথা বলেই তার চূড়ান্ত রূপরেখা তৈরি করা হবে বলে খাদ্য দপ্তরের আধিকারিকরা জানাচ্ছেন। রাজ্যের ২৩টি ২৮টি দোকান থেকে ইতিমধ্যেই বাড়ি বাড়ি রেশন পৌঁছে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে খাদ্য দপ্তর।
খাদ্য মন্ত্রী হিসেবে সদ্য দায়িত্ব নিয়েছেন রথীন ঘোষ। তিনি জানিয়েছেন, দুয়ারে রেশন মুখ্যমন্ত্রীর স্বপ্নের প্রকল্প। যত দ্রুত সম্ভব দুয়ারে রেশন প্রকল্প চালু করা হবে। এই নিয়ে অফিসারদের সঙ্গে শীঘ্রই আলোচনায় বসবেন তিনি।
করোনার সংক্রমণ রুখতে রবিবার থেকে রাজ্যে কড়া নিষেধাজ্ঞা জারি হচ্ছে। আগামী ১৫ দিন দোকানপাট, সরকারি ও বেসরকারি অফিস সব বন্ধ থাকবে। গাড়ি চলাচলের উপরও নিষেধাজ্ঞা জারি হচ্ছে। এর ফলে রাজ্যের স্বাভাবিক জনজীবন বিপর্যস্ত হলেও রেশন পরিষেবা যাতে সচল থাকে, সেই ব্যাপারে সচেষ্ট খাদ্য দপ্তর। অল ইন্ডিয়া ফেয়ার প্রাইস শপ ডিলার্স ফেডারেশনের সম্পাদক বিশ্বম্ভর বসু এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছেন, করোনা সংক্রমণে রাশ টানতে আগামী ১৫ দিনের জন্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে কঠোর নিয়ন্ত্রণ জারি হলেও সেই জন্য রেশন পরিষেবা কোনও ভাবেই ব্যাহত হবে না। রেশন একটি জরুরি পরিষেবা। রাজ্যের সব রেশন ডিলারকে এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
নির্বাচনের আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছিলেন, তৃণমূল ফের ক্ষমতায় এলে এ বার দুয়ারে রেশন চালু করা হবে। মানুষকে আর কষ্ট করে রেশন দোকানে যেতে হবে না। বাড়িতে বসেই তাঁরা রেশন পেয়ে যাবেন। ইস্তাহারেও সে কথা জানিয়েছিল তৃণমূল। তাই, দুয়ারে রেশন প্রকল্পকে এখন পাখির চোখ করেছে খাদ্য দপ্তর।
Corona প্রতিরোধে ভারতের বাজারে এলো নতুন ওষুধ Antibody Cocktail
খাদ্য দপ্তরের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘দেশের মধ্যে একমাত্র অন্ধ্রপ্রদেশে দুয়ারে রেশন প্রকল্প চালু হয়েছে। জগন মোহন রেড্ডি অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ওই রাজ্যে বাড়ি বাড়ি রেশন পৌঁছে দেওয়ার কাজ শুরু হয়।’ রেশনের খাদ্যসামগ্রী বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিতে সেখানে কয়েক হাজার ছোট গাড়িও কেনা হয়েছে। সেই গাড়িতে করে বিভিন্ন গ্রামে ও মহল্লায় পৌঁছে যাচ্ছে ভর্তুকির রেশন। গ্রাহকদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে প্যাকেট বন্দি চাল-গম।
তাহলে কি বুধবার থেকে ভারতে Facebook, Twitter, Instagram বন্ধ হয়ে যাবে?
বিশ্বম্ভর বসু বলেন, ‘দুয়ারে রেশন প্রকল্প চালু করার জন্য ডিলারদের কাছ থেকে খাদ্য মন্ত্রী সহযোগিতা চান। কি ভাবে এই প্রকল্পকে কার্যকর করা যায়, সেই ব্যাপারে খাদ্য দপ্তর আমাদের কাছ থেকে পরামর্শ চেয়েছে। তিনটি বিকল্প প্রস্তাব দিতে বলা হয়েছে। নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে আমরা শীঘ্রই আমাদের বক্তব্য জানিয়ে দেব।’ বিশ্বম্ভর জানান, দুয়ারে রেশন পৌঁছে দিতে গেলে গাড়ি লাগবে। সেই জন্য বাড়তি লোক নিয়োগ করতে হবে। রেশন ডিলারদের কমিশন বাড়াতে হবে। এখন কাউকে রেশন দেওয়ার আগে ‘পস’ বা পয়েন্ট অফ সেল যন্ত্রে আঙুলের ছাপ নেওয়া হয়। দুয়ারে রেশনের সময়ে সেই কাজটাই বা কি ভাবে হবে, তা নিয়ে রেশন ডিলাররা চিন্তিত।
বাড়িতে বসেই এবার করে নিন COVID পরীক্ষা
মুখ্যমন্ত্রীর এই উদ্যোগের ফলে এবার প্রত্যন্ত গ্রামে মানুষের কাছে রেশন পৌঁছে যাবে। তবে, পরিবহণ-সহ অন্য খাতে খরচও অনেকটা বাড়বে। মুখ্যমন্ত্রী যদি এই বাড়তি খরচের সংস্থানও করে দেন, তাহলে মানুষকে আরও ভালো পরিষেবা দেওয়া যাবে। রাজ্য সরকারের ‘দুয়ারে রেশন’ প্রকল্পে বাদ গেল না বীরভূমও। সিউড়ির হাটজানবাজারে পাইলট প্রোজেক্ট হিসেবে বাড়িতে বাড়িতে পৌঁছে গেল রেশন। খুশি গ্রাহকরা।
কাউকে আর দোকানে গিয়ে, কষ্ট করে রেশন তুলতে হবে না। ভোটের প্রচারে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তৃতীয়বার ক্ষমতা এলে বাড়িতে বাড়িতে রেশন পৌঁছে দেবেন। একুশের ভোটে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় ফিরেছে তৃণমূল। মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নিয়ে প্রতিশ্রুতি রাখলেন মমতা।