ডিজিটাল ডেস্ক: ইতিহাসের পাতায় রক্তদিয়ে লেখা আজ অর্থাৎ ১৩ এপ্রিল জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের গল্প। আজ তার ১০৪ বছর পূর্তি। ১৯১৯ সালের আজকের দিনে গণহত্যার সাক্ষী থেকেছিল ভারতের জনগণ।
কি হয়েছিল সেদিন, ১৯১৯ সালে ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক রাওলাট আইন পাশ করা হয়েছিল। আইনে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে বিনা বিচারে যে কাউকে কারারুদ্ধ করার ক্ষমতা দেওয়া হয়। আইনটি পাশ হতেই, ক্ষোভে ফেটে পড়েছিলেন দেশের হাজার হাজার স্বাধীনতা সংগ্রামী। আইনের প্রতিবাদে ১৯১৯ সালের ১৩ এপ্রিল জালিয়ানওয়ালাবাগে জড়ো হয়েছিল আবালবৃদ্ধবনিতা।
জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের কারণ?
প্রকৃতপক্ষে, সেদিন জালিয়ানওয়ালাবাগে ব্রিটিশদের দমননীতি, রাওলাট অ্যাক্ট এবং সত্যপাল ও সাইফুদ্দিনের গ্রেপ্তারের বিরুদ্ধে একটি সভার আয়োজন করা হয়েছিল। তবে এ সময় শহরে কারফিউ জারি করা হয়। কিন্তু কারফিউর মধ্যেও হাজার হাজার মানুষ সভায় যোগ দিতে এসেছিলেন। বৈশাখী উপলক্ষে সপরিবারে সেখানে মেলা দেখতে গিয়েছিলেন কয়েকজন।
ব্রিটিশ সরকার যখন জালিয়ানওয়ালাবাগে এত লোকের সমাগম দেখে তারা হতবাক হয়ে গিয়েছিল। এ সময় পাঁচ হাজার মানুষ সেখানে উপস্থিত বলে জানা গেছে। বিক্ষোভ সমাবেশ চলাকালীন জেনারেল ডায়ারের নেতৃত্বে ৯০ জন ব্রিটিশ ব্রিটিশ পুলিশবাহিনী সমাবেশ স্থলের চারদিক ঘিরে ফেলে। কোনও বিক্ষোভকারী যাতে পালাতে না পারেন, তারজন্য সমস্ত প্রস্থানের পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। চলে নির্বিচারে গুলি। শত শত লোক নিহত হন। জখম হন ১ হাজার ২০০ জন।
আরও পড়ুন : প্রধানমন্ত্রী মাতৃত্ব বন্দনা যোজনা, সরাসরি অ্যাকাউন্টে যাবে ৬ হাজার টাকা
জানা যায় রাউলাট আইন প্রবর্তনের পরেই সভা-সমাবেশের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল ব্রিটিশ সরকার। নিষেধাজ্ঞা নিয়ে বিক্ষোভকারীরা সচেতন ছিল না। সভাস্থলের মধ্যে একটি কুয়ো ছিল। যখন চারদিক ঘিরে ব্রিটিশ বাহিনী তাণ্ডব চালাচ্ছে, তখন অনেক বিক্ষোভকারীর প্রাণ বাঁচাতে পালানোর সময় কুয়োতে পড়ে মৃত্যু হয়।
অনেকে আবার ইনকিলাব জিন্দাবাদ ধ্বনি দিয়ে কুয়োর মধ্যে পড়ে আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছিল। কুয়ো থেকেই ২ শতাধিকের বেশি লাশ উদ্ধার করা হয়। ঘটনার প্রতিবাদে উত্তাল হয় সারা দেশ। নাইটহুড উপাধি ত্যাগ করেন রবীন্দ্রনাথ।
এরপরেই পরিস্থিতি সামাল দিতে তদন্তের জন্য হান্টার কমিশন গঠন করে ব্রিটিশ সরকার। সরিয়ে দেওয়া হয় জেনারেল ডায়ারকে। ১৯২৭ সালে ২৩ জুলাই মাথায় রক্তক্ষরণে মৃত্যু হয় ডায়ারের। কিন্তু মৃত্যুশয্যায় জালিয়ানওয়ালাবাগের ঘটনা পিছু তাড়া করেছিল তাঁকে।
ইতিহাসবিদদের একাংশের মতে, জেনারেল ডায়ার ঘটনাস্থলে থাকলেও, তিনি কিন্তু গুলি চালানোর নির্দেশ দেননি।প ঞ্জাবের লেফটেন্যান্ট গভর্নর মাইকেল ফ্রান্সিস ও’ডায়ারই গুলি চালানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন। পরে এর ফলই ভুগতে হয়েছিল তাঁকে। ১৯৪০ সালে ১৩ মার্চ লন্ডনের ক্যাক্সটন হলে বিপ্লবী উধম সিংয়ের গুলিতে প্রাণ হারান ও’ডায়ার।
আরও পড়ুন : জাল ওষুধ তৈরির অভিযোগে ১৮ টি ফার্মা কোম্পানির লাইসেন্স বাতিল করল কেন্দ্র
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৫১ সালে ভারত সরকার জালিয়ানওয়ালাবাগে মৃতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করে। প্রতি বছর আজকের দিনটিকে নিয়মিতভাবে মৃতদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে আসা হচ্ছে।
জালিয়ানওয়ালাবাগে যারা শহীদ হয়েছেন তাদের সঠিক পরিসংখ্যান আজও জানা যায়নি, তবে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ৪৮৪ জন শহীদের তালিকা রয়েছে, যেখানে জালিয়ানওয়ালাবাগে ৩৮৮ জন শহীদের তালিকা রয়েছে। ব্রিটিশ সরকারের নথিতে ৩৭৯ জন নিহত ও ২০০ জন আহত হওয়ার দাবি করা হয়েছে। যদিও বেসরকারী পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ব্রিটিশ সরকার এবং জেনারেল ডায়ারের এই গণহত্যায় ১০০০ জনেরও বেশি মানুষ শহীদ এবং ২০০০-এরও বেশি ভারতীয় আহত হয়েছিল।