196
ওয়েব ডেস্ক: ‘কৃষক বন্ধু’ প্রকল্পে কেন্দ্রকে টেক্কা দিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। গত ১৭ জুন নবান্ন থেকে এই প্রকল্পের সংশোধিত সংস্করণের সূচনা করেন মমতা। যেখানে কৃষকদের জন্য অনুদানের পরিমাণ একধাক্কায় বাড়িয়ে দ্বিগুণ করা হয়। সূত্রের খবর, সেই প্রকল্প শুরু হওয়ার ১৫ দিনের মাথায় নবান্নে যে রিপোর্ট এসেছে তাতে বেশ খুশি রাজ্য সরকার। জানা যাচ্ছে, মাত্র ১৫ দিনেই রাজ্যের ৬২ লক্ষ কৃষকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে কৃষক বন্ধুর প্রথম কিস্তির টাকা পৌঁছে গিয়েছে।
গোটা নির্বাচন পর্বে কেন্দ্রের ‘পিএম কিষান সম্মান নিধি’ প্রকল্প বাংলায় লাগু না হওয়ায় তৃণমূলকে নিশানা করেছে বিজেপি। তার পাল্টা ‘কৃষক বন্ধু’ কে তুলে ধরেছিল শাসক দল। তখন বছরে ৫ হাজার টাকা অনুদান পেতেন চাষিরা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আশ্বাস দিয়েছিলেন, ক্ষমতায় ফিরলে ‘কৃষক বন্ধু’ প্রকল্পে বার্ষিক অনুদান বাড়িয়ে করা হবে ৬ হাজার টাকা। কার্যক্ষেত্রে অনুদান দ্বিগুণ বাড়িয়ে ১০ হাজার টাকা করে দেন মুখ্যমন্ত্রী।
নবান্ন সূত্রে খবর, প্রথম কিস্তি বাবদ ৬২ লক্ষ কৃষকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ৫ হাজার টাকা করে পাঠানো হয়েছে। এই প্রথম কিস্তি দিতে রাজ্য সরকারের কোষাগার থেকে খরচ হয়েছে মোট ১৮০০ কোটি টাকা। চলতি বছরের শেষের দিকেই কৃষক বন্ধু প্রকল্পের দ্বিতীয় কিস্তির টাকাও রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে কৃষকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পাঠিয়ে দেওয়া হবে বলে জানা গিয়েছে।
নতুন কৃষক বন্ধু প্রকল্পে কি কি সুবিধা পাচ্ছেন রাজ্যের চাষিরা? দেখে নিন একনজরে…
- আগে কৃষকরা ৫ হাজার টাকা পেতেন, তাঁরা ১০ হাজার টাকা পাবেন। খেত মজুর ও বরগাদারদের যাঁদের তেমন জমি নেই, তাঁদের আগে ২ হাজার টাকা করে দেওয়া হত, এ বার তাঁদের ৪ হাজার টাকা দেওয়া হবে।
- মমতা জানিয়েছেন, কেন্দ্র সব ২ একর জমি না থাকলে কৃষকদের টাকা দেয় না, কিন্তু রাজ্য সব কৃষককেই টাকা দেবে। ৬০ লক্ষ কৃষক এই টাকা পায়। দেশের মধ্যে প্রথম এত বড় প্রজেক্ট কৃষকদের জন্য আনা হল।
- ১৭ জুন টাকা তুলে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়। জেলাশাসকদের দায়িত্ব নিতে বলেন মমতা।
- এই স্কিমে কোনও কৃষকের মৃত্যু হলে ২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত দেওয়া হয়। জমিতে কোনও মিউটেশন ফি লাগে না।
- ২৮০০০ পরিবারকে ডেথ বেনিফিট দেওয়া হয়েছে। জমির উপযুক্ত নথি থাকলে তবে আবেদন করা যেত, এখন নিজে জমি দেখিয়ে প্রকল্পের আওতায় আসতে পারে।
- গত ৯ বছরে নানা কারণে যাঁদের জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, এমন ১ কোটি ২০ লক্ষ পরিবারকে ৩৫০০ কোটি টাকার সহায়তা দিয়েছে রাজ্য। নতুন করে কৃষি কাজ শুরু করার জন্য এই টাকা দেওয়া হয়। ইয়াসের পরও এই টাকা দেওয়া হচ্ছে। কৃষকদের অ্যাকাউন্টে পৌঁছে যাবে সেই টাকা।
- এখনও পর্যন্ত ৭০ লক্ষ কিষান ক্রেডিট কার্ড দেওয়া হয়েছে কৃষকদের, ৫০ লক্ষ সয়েল টেস্ট কার্ড দেওয়া হয়েছে, কম ভাড়ায় যন্ত্রপাতি দেওয়া হচ্ছে কৃষকদের।
এ দিন নবান্নে ‘প্রতিশ্রুতি পূরণ’ নামে একটি বই প্রকাশ করেছে রাজ্য সরকার, কৃষকদের জন্য কি কি প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, সেটা কি ভাবে পূরণ করা হল সেই বিষয়ের উল্লেখ আছে ওই বইতে। একই সঙ্গে বাংলায় কৃষকদের জন্য কি কি সুবিধা দেওয়া হচ্ছে সেই বিষয়েও বিস্তারিত লেখা হয়েছে ওই বইতে।
এই দিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন্দ্রের চেয়ে রাজ্য প্রকল্প যে এগিয়ে তা স্মরণ করিয়ে দেন। তিনি বলেছিলেন,’কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকল্পে উপভোক্তার সংখ্যা খুব কম। তাছাড়া ২ একর জমি থাকলে অনুদান মেলে। আমরা সবাইকে দিই। কেন্দ্রের প্রকল্পে খেতমজুর, বর্গাদার নেই। এটা একটা বড় প্রকল্প। সারা ভারতে বাংলাই প্রথম।’