ওয়েব ডেস্ক: আজ পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিলেন প্রয়াত প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের ছেলে অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়। । তিনি বলেন, ‘বাম বিরোধিতার জন্যই চাকরি ছেড়ে রাজনীতিতে এসেছি। সম্প্রতি বিজেপি ঝড় রুখে দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূলে যোগ দিয়ে অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, “দিদির অনুমতিতে, অভিষেক বাবুর অনুমতিতে আজ আমি এখানে হাজির। আজ সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের একজন প্রাথমিক সদস্য হিসাবে যোগদান করলাম। এক কংগ্রেস থেকে অন্য কংগ্রেসে। মূল থেকে তৃণে। কিন্তু কংগ্রেসেই আছি।”

ছবি pti
অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় জঙ্গিপুরের দু’ বারের প্রাক্তন সাংসদ এবং নলহাটির প্রাক্তন বিধায়ক। তার তৃণমূলে যোগদান এ রাজ্যে কংগ্রেসের কাছে জোরালো ধাক্কা শুধু এ রাজ্য নয়, অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় যেহেতু প্রণব মুখোপাধ্যায়ের পুত্র, তাই সর্বভারতীয় স্তরেও অস্বস্তিতে পড়ল কংগ্রেস। তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানান, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মাধ্যমেই তৃণমূলে যোগদানের ইচ্ছে প্রকাশ করেছিলেন অভিজিৎ।
বাবা ছিলেন কংগ্রেসের অন্যতম প্রধান নেতা। গত কয়েক দশকে জাতীয় রাজনীতিতে অন্যতম প্রধান কুশীলব ছিলেন প্রণব। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করার পাশাপাশি কংগ্রেসের ‘ক্রাইসিস ম্যানেজার’ হিসেবেও তাঁর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর সক্রিয় রাজনীতি থেকে সরে গেলেও, আমৃত্যু কংগ্রেসের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল প্রণবের। কিন্তু তাঁর ছেলেই এবার কংগ্রেস ছেড়ে যোগ দিলেন তৃণমূলে।
উপ-মেয়রের শাস্তির দাবিতে আসানসোলের পুর অফিস ঘেরাও মীনাক্ষীদের
তবে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার সময় নিজের পুরনো দল নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়৷ তবে ২০১১ সালে নলহাটি থেকে কংগ্রেসের টিকিটে বিধায়ক হওয়ার কৃতিত্বও মমতাকেই দিয়েছেন তিনি৷ তাঁর আশা, এ রাজ্যের সাম্প্রতিকতম নির্বাচনের মতোই ভবিষ্যতে হয়তো গোটা দেশেই বিজেপি-কে রুখে দেবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
নিজের এই সিদ্ধান্ত প্রসঙ্গে অভিজিৎ বলেছেন, ‘সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের মুখ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পশ্চিমবঙ্গে আমরা বামেদের সঙ্গে লড়াই করছি। মানুষ এটা মেনে নেননি। পশ্চিমবঙ্গে বিজেপিকে রোখার জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে লিডারশিপ দেখিয়েছেন, তা মানুষ গ্রহণ করছেন। সিপিএম-কংগ্রেসের জোট ভুল।’
বাদল অধিবেশন শুরু হতেই সংসদের সামনে ধর্নাই বসবেন ২০০ কৃষক, জানিয়েছে সংযুক্ত কিষান মোর্চা (SKM)
কয়েকদিন ধরেই জঙ্গিপুরের প্রাক্তন সাংসদ অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে তৃণমূলের ঘনিষ্ঠতা নিয়ে নানা জল্পনা চলছিল। গত ৯ জুন প্রণব-পুত্র অভিজিৎ তাঁর জঙ্গিপুরের বাসভবনে তৃণমূলের জেলা সভাপতি, জঙ্গিপুরের সাংসদ-সহ একাধিক নেতার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এরপরই জেলাজুড়ে জল্পনা ছড়ায়, তা হলে কি অভিজিৎও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত শক্ত করতে উদ্যত? এদিন সেই জল্পনাতেই সিলমোহর পড়ল।
অভিজিতের যোগদান পর্বে প্রণব মুখোপাধ্যায়কে স্মরণ করে দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘তিনি শুধু ভারতবর্ষের রাষ্ট্রপতি ছিলেন না, আমাদের পথ প্রদর্শক ছিলেন৷ আপদে, বিপদে আমাদের পরামর্শ দিতেন প্রণব মুখোপাধ্যায়৷ তাঁর সুপুত্র অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়৷ আমরা আশা করব তাঁর নিজের এবং পারিবারিক অভিজ্ঞতা ও রাজনৈতিক বিচক্ষণতা, তা বিজেপি মুক্ত ভারতবর্ষ তৈরি করার যে সংগ্রাম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি তাতে সক্রিয় ভাবে অংশ নিয়ে সেই লড়াইকে আরও মজবুত করবেন৷’
‘কৃষক বন্ধু’ সূচনার ১৫ দিনের মধ্যে ৬২ লক্ষ চাষিকে অনুদান মমতার
তৃণমূলে যোগ দিয়ে অভিজিৎ বলেন, ‘ধন্যবাদ জানাবো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে। আজকে তৃণমূলের প্রাথমিক সদস্য হিসেবে যোগদান করলাম। এক কংগ্রেস থেকে আর এক কংগ্রেসে এলাম৷ ২০১১ সালে সরকারি চাকরি ছেড়ে যখন কংগ্রেসে যোগদান করেছিলাম, তখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বেই বাম বিরোধী হাওয়া উঠেছিল৷ সেই হাওয়াতে ভর করেই আমি নলহাটি থেকে জয়ী হয়েছিলাম। এতে আমার নিজের কোনও কৃতিত্ব ছিল না৷ মমতা দিদি রাজ্যে বিজেপি-র মতো সাম্প্রদায়িক শক্তির উত্থানকে রুখে দিয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গে তিনি যেভাবে বিজেপি-কে রুখতে পেরেছেন, ভবিষ্যতে তাঁর নেতৃত্বে এবং আরও অনেকের সহযোগিতা নিয়ে হয়তো গোটা ভারতবর্ষে তা সম্ভব হবে।’
বাবার প্রয়াণের পর কংগ্রেস ছাড়লেন। বাবা বেঁচে থাকলে এই সিদ্ধান্তকে সমর্থন করতেন? এ প্রসঙ্গে অভিজিৎ বলেছেন, ‘সনিয়া গাঁধী তাঁর ছেলে রাহুল গাঁধীর জন্য যা করেছেন, প্রণববাবু কি আমাদের জন্য তা করেছেন? বাবা বেঁচে থাকলে বলতেন, সিদ্ধান্ত তোমার নিজের।’