নয়াদিল্লী। করোনার বেনজির সংক্রমণে চিন্তার ভাঁজ দেশবাসীর কপালে। দেশে করোনা সংক্রমণ মোকাবিলায় এবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি লিখলেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং। চিঠিতে করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রীকে পাঁচ দফা পরামর্শ দিয়েছেন মনমোহন সিং। কিছুদিন আগেই কংগ্রেসের কার্যসমিতির বৈঠক হয়েছিল। ওই বৈঠকে দেশে করোনা পরিস্থিতি নিয়ে কংগ্রেসের মধ্যেই আলোচনা হয়। বৈঠকের কিছুদিন পরেই প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর এই চিঠি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। তিনি বলেছেন ওই চিঠিতে মনমোহন সিং স্পষ্ট লিখেছেন, স্বচ্ছতা বজায় রাখতে রাজ্যে রাজ্যে ভ্যাকসিন বন্টন সংক্রান্ত কেন্দ্রের পরিকল্পনা সামনে আনা হোক।
পাশাপাশি সামনের সারির কর্মী হিসেবে কাদের গুরুত্ব দেওয়া হবে, সেই বিষয়ে বিবেচনার ভারও যাতে রাজ্যের উপর ছাড়া হয়, পরামর্শ মনমোহন সিংয়ের। তিনি চান, এ ক্ষেত্রে রাজ্য যেন বয়সের ঊর্ধ্বসীমা ৪৫-এর কম করার কথাও বিবেচনা করে মোদি সরকার। এবং এই তালিকার মধ্যে মধ্যে অটোচালক, বাসচালক, স্কুলশিক্ষকদের আনার কথাও লিখেছেন মনমোহন সিং।
ভ্যাকসিনের অপ্রতুলতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে অনেক রাজ্যই। মনমোহন সিং এক্ষেত্রে বলছেন, ভ্যাকসিনের যোগান বাড়াতে বাজারে কোভিশিল্ড-কোভ্যাকসিন বাদ দিয়ে অন্য সংস্থার ভ্যাকসিনও আনতে। সে ক্ষেত্রে কোনও ওই ভ্যাকসিনের কোনও বিশ্বাসযোগ্য সংস্থার ছাড়পত্র থাকলেই চলবে। ইওরোপিয়ান মেডিক্যাল এজেন্সি বা এই ধরনের অন্য যে কোনও সংস্থার ছাড়পত্র বিবেচনায় আসতে পারে বল মত প্রাক্তন প্রধামন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের। এই প্রসঙ্গে তিনি এইচআইভি-মেডিসিনের প্রসঙ্গ তুলে এনেছে। নমুনা হিসেবে ইজরায়েলের টিকাকরণ পদ্ধতির কথাও।
টিকাকরণের খুব শিগগিরি জনসংখ্যার একটা বড় অংশকে এর আওতায় আনার প্রস্তাবও রেখেছেন মনমোহন সিং। তিনি লিখেছেন, “ভারতের খুব অল্প মানুষকেই এখনও টিকা দেওয়া সম্ভব হয়েছে। আমি বিশ্বাস করি খুব শিগগিরই অনেক বেশি ভারতবাসীকে টিকার আওতায় আনা যাবে যদি সঠিক নীতি নির্ধারণ করা হয়। ”
চিঠিতে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী স্পষ্ট উল্লেখ করেন, সরকারকে জানাতে হবে যে সরকার ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলিকে ঠিক কী নির্দেশ দিয়েছে। সরকার যদি বেশি সংখ্যক মানুষকে ভ্যাকসিন দিতে চায়, তাহলে এখন থেকেই ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলিতে বরাত দিতে হবে যাতে নির্দিষ্ট সময়ের আগে ভ্যাকসিন ঠিকমতো পৌঁছে যায়। পাশাপাশি দেশব্যপী ভ্যাকসিনের বণ্টন যাতে ঠিকভাবে হয়, সেই কথাও উল্লেখ করেছেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী। সেক্ষেত্রে তাঁর পরামর্শ, সরকারের কাছে যত ভ্যাকসিনের ডোজ মজুত থাকবে, তার ১০ শতাংশ জরুরিভিত্তিতে ব্যবহারের জন্য রেখে বাকিটা রাজ্যগুলির মধ্যে বিতরণ করে দেওয়া উচিত যাতে রাজ্যগুলি ঠিকভাবে ভ্যাকসিনের ডোজ দিতে পারে।
ভ্যাকসিন উৎপাদক সংস্থাদের পাশে থাকার পরামর্শও দিচ্ছেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী। অর্থসাহায্য ও অন্যান্য ছাড় দেওয়ার প্রস্তাব দিচ্ছেন তিনি। এখন দেখার প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর মতামত কতটা গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করে মোদি সরকার।
