ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল(Victoria memorial) সম্বন্ধে কিছু অজানা তথ্য।

by Chhanda Basak
ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল(Victoria memorial) সম্বন্ধে কিছু অজানা তথ্য।

ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল(Victoria memorial) নাম শুনেছি আমরা প্রায় সকলেই। কিন্তু আমরা অনেকেই জানি না কবে ও কোন সময় এইটি তৈরি হইয়ে ছিল র কেনই বা তৈরি হইছিল। আসুন এই সব প্রশ্নের উত্তর আজ জেনে নেওয়া যাক। কলকাতার গরের মাঠ বললেই তার অপর দিকে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল(Victoria memorial) কখনওই আমাদের চোখ এড়াতে পারবেনা। পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা (পূর্ববর্তী কলকাতা) শহরের প্রাণকেন্দ্রে সাদা মার্বেলের তৈরি বিশাল স্মৃতিসৌধটি পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম বিখ্যাত স্মৃতিস্তম্ভ যা এই রাজ্যের যাদুঘর এবং জনপ্রিয় পর্যটন স্থান হয়ে উঠেছে।

এটা জানলেও চমকে যাবেন, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের(Victoria memorial) জমির ওপরেই আগে ছিল প্রেসিডেন্সি কারাগার। পরে এই কারাগার সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় আলিপুরে এবং সেই কারাগারের জমির ওপরেই তৈরি করা হয় ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল। লর্ড কার্জন, যিনি তখন ভারতের ভাইসরয় ছিলেন। এই স্মৃতিসৌধটি রূপকথার সৌন্দর্য এবং সুরুচি পূর্ণতা রানী ভিক্টোরিয়ার (১৮১৯-১৯০১) স্মৃতিতে উৎসর্গ করা হয়েছিল। এই দুর্দান্ত এবং অপূর্ব স্মৃতিসৌধটি কেবল ভারতীয় উপমহাদেশে ব্রিটিশ ক্রাউন শাসনের স্মারক হিসাবে দাঁড়িয়েছে তা নয়, বরং ইন্দো-সারেসনিক পুনর্জাগরণবাদী স্টাইলে এটি একটি চমৎকার স্থাপত্য রত্ন হিসাবেও দাঁড়িয়েছে। কোলকাতা মেট্রো শহরের মাঝে ভিক্টোরিয়ান যুগের সারমর্মটি অনুভব করার জন্য এটি ভ্রমণকারীদের প্রধান গন্তব্য।

রানি ভিক্টোরিয়া ছিলেন United Kingdom of Great Britain এর রানি জুন ২০ , ১৮৩৭ থেকে এবং ১৮৭৯ সালের ১ মে থেকে ভারতের সম্রাজ্ঞী। ২২ শে জানুয়ারি ১৯০১ তিনি মারা জান। তার মৃত্যুর পরে, লর্ড কার্জন একটি জাদুঘর এবং উদ্যান সহ একটি বিশাল এবং দুর্দান্ত ভবন নির্মাণের ধারণাটি কল্পনা করেছিলেন যেখানে একা এবং সকলেই সমৃদ্ধ অতীতের এক ঝলক দেখতে পারে। স্মৃতিস্তম্ভের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন Prince of Wales George V ৪ জানুয়ারি, ১৯০৬ সালে, এই George V পরে ইংল্যান্ড এর রাজা হন ৬ মে, ১৯১০ সালে। ১৯২১ সালে স্মৃতিসৌধটি সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছিল; তবে এটি নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার সাথে সাথে এটি রাজধানী শহরের পরিবর্তে একটি প্রাদেশিক শহরের অংশে পরিণত হয়েছিল, কারণ ততদিনে King George V ভারত এর রাজধানী কলকাতা থেকে দিল্লি তে স্থানান্তরিত করেছিলেন।

স্মৃতিসৌধটি নির্মাণের জন্য কার্জন কর্তৃক গৃহীত একটি আবেদনে দেখা গেছে, লন্ডনের ব্রিটিশ সরকার, Royal Family র ব্যক্তিরা সহ অনেকেই এগিয়ে এসে স্বেচ্ছায় অর্থ দান করেছিলেন । স্মৃতিসৌধটি নির্মাণে সেইসময় মোট ব্যয় হইছিল Rs. ১০৫,০০,০০০। উইলিয়াম এমারসন, রয়্যাল ইন্সটিটিউট অফ ব্রিটিশ আর্কিটেক্টের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ছিলেন স্মৃতিসৌধের প্রধান স্থপতি যা ইন্দো-সারেসনিক পুনরুজ্জীববাদী স্টাইলে নকশা করা হয়েছিল। এই স্টাইলটি মিশরীয়, ভিনিশিয়ান, ডেকানি, মুঘল এবং অন্যান্য ইসলামী শৈলীর সাথে ব্রিটিশ স্থাপত্য শৈলীর সংমিশ্রণ ঘটিয়েছিল।

রাজস্থানের যোধপুর থেকে আনা মাকরানা মার্বেলের তৈরি, এটি ১০৩ মিটার এবং ৬৯ মিটার চোয়ারা এবং ৫৬ মিটার উচ্চতা। স্কটিশ চিকিৎসক এবং উদ্ভিদবিজ্ঞানী স্যার ডেভিড পেন এবং লর্ড রেডসডেলকে ৬৪ একর জুড়ে বিস্তীর্ণ উদ্যানের নকশা করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, উদ্যানের দরজা এবং উত্তর দিকের সেতুটি ডিজাইন এর দায়িত্ব পরেছিল Vincent J. Esch এর ওপর। বাগানটি বর্তমানে ২১ টি মালী দলের দ্বারা রক্ষণাবেক্ষণ করা হচ্ছে। কলকাতার মার্টিন অ্যান্ড কোং স্মৃতিসৌধের নির্মাণকাজটি পরিচালনা করেছিলেন। স্বাধীনতা পরবর্তী ভারতের স্মরণে কিছু সংযোজন করা হয়েছিল।

স্মৃতিসৌধের অভ্যন্তরে রয়েল গ্যালারী, ভাস্কর্য গ্যালারী এবং কলকাতার গ্যালারী সহ 25 টি গ্যালারী রয়েছে। রানি ভিক্টোরিয়া এবং স্যাক্সে-কোবার্গ এবং গথার স্বামী প্রিন্স অ্যালবার্টের বিভিন্ন চিত্র এবং তাদের জীবনের বিভিন্ন মুহূর্তের চিত্রিত তেল চিত্রগুলি রাজকীয় গ্যালারীটিতে প্রদর্শিত হয়েছে। নবীনত্বর সংযোজনাটি ছিল কলকাতা গ্যালারী, যার ধারণার তত্ত্বটি ১৯৭০ এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী সাইয়িদ নুরুল হাসান করেছিলেন। তিনি ১৯৮৬ সালে তিনি বঙ্গ ও ওড়িশার গভর্নর হয়েছিলেন সাথে সাথে মেমোরিয়াল বোর্ড অব ট্রাস্টির চেয়ারম্যান হিসাবেও নিযুক্ত হন। ১৯৯২ কলকাতা গ্যালারী খোলা হয়েছিল।

জব চার্নকের দিন থেকে শুরু হয়ে যখন নয়াদিল্লী কলকাতাকে ভারতের রাজধানী হিসাবে প্রতিস্থাপন করেছিল, তখন পর্যন্ত সবটাই গ্যালারীটির দৃশ্যমান প্রদর্শনীর মধ্য দিয়ে কলকাতা এবং এর পর্যায়ক্রমিক বিকাশের সমস্ত চিত্র তুলে ধরা হইছে। আরেকটি সংযোজনা, জাতীয় নেতার গ্যালারীটিতে ভারতীয় স্বাধীনতার সাথে সম্পর্কিত প্রতীক এবং প্রতিকৃতি প্রদর্শন করা হয়। ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল এতটাই বড় যে এর ভিতরে ২৫ টি গ্যালারি আছে। গ্যালারি দেখা শুরু করলে শেষ হওয়া মুশকিল। কি কি গ্যালারি? রয়েছে স্কাল্পচার গ্যালারি, রয়্যাল গ্যালারি, সেন্ট্রাল হল, পোট্রেট গ্যালারি, আর্মস এন্ড আড়মাড় গ্যালারি, ক্যালকাটা গ্যালারি এবং আরও বেশ কিছু গ্যালারি। এ ছাড়াও এখানে সেই সময়ের স্টাম্পস কয়েন এবং ম্যাপের একটি গ্যালারিও আছে যা খুবই ইন্টারেস্টিং।

এটি অনন্যদের মধ্যে চিত্রকলা, নিদর্শন, অস্ত্র, টেক্সটাইল, কয়েন এবং স্ট্যাম্পগুলির উল্লেখযোগ্য সংগ্রহ এবং রানীর কিছু সংখ্যক সম্পদ রাইটিং ডেস্ক, চেয়ার এবং স্ক্র্যাপ-বুকের মতো বজায় রাখে। ওমর খৈয়ামের রোবাইয়াৎ এবং উইলিয়াম শেক্সপিয়রের মাস্টারপিসের মতো এখানে বইয়ের বিরল সংগ্রহ সংরক্ষণ করা হয়েছে। স্মৃতিসৌধের প্রবেশদ্বারটিতে মার্বেলের সিঁড়িতে রানী ভিক্টোরিয়ার একটি ব্রোঞ্জের মূর্তি রয়েছে “স্টার অফ ইন্ডিয়ার” পোশাক পরে ব্রোঞ্জের সিংহাসনে বসে আছে। বিল্ডিংয়ের চারপাশের অন্যান্য মূর্তির মধ্যে রয়েছে এডওয়ার্ড সেভেন, কার্জন, ডালহৌসি এবং হেস্টিংসের মুরতি। স্মৃতিসৌধের আর একটি আকর্ষণ হ’ল অ্যাঞ্জেল অফ ভিকট্রি, একটি কালো ব্রোঞ্জের দেবদূত যেটা প্রধান গম্বুজের শীর্ষে অবস্থিত। জটা একটা বল বেয়ারিং এর সাথে যুক্ত। এই হাতের “অ্যাঙ্গেল অফ ভিকট্রি” বিউগল হাতে নিয়ে যেটা তীব্র বাতাস বয়ে চলার সাথে সাথে ঘোরে। গম্বুজের আশেপাশে ন্যায়বিচার, মাতৃত্ব, আর্কিটেকচার, লার্নিং এবং প্রুডেন্সের মতো বেশ কয়েকটি রূপক ভাস্কর্যটি এই জায়গাটির ব্রিটিশ আভা বাড়িয়ে তোলে।

ভারত স্বাধীন হয়েছিল ১৯৪৭ সালে। তার পরে এই দেশে নানা প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা বিভিন্ন ব্রিটিশ শাসকের যে ভাস্কর্য ছিল, তা তুলে ফেলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরকম অনেক ভাস্কর্যই এখন শোভা পায়ে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের এই বিশাল বাগানে।

বছরের পর বছর ধরে এই স্মৃতিসৌধটি কেবল কলকাতার অন্যতম বিখ্যাত পর্যটন কেন্দ্র হিসাবে আবির্ভূত হয়নি, পাশাপাশি পরিবার এবং বন্ধুবান্ধবদের ছাড়াও LOVE BIRDS জন্য এটি একটি প্রিয় স্থান হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাত পড়ার সাথে সাথে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের আলোই এটিকে আরও মন্ত্রমুগ্ধকর দেখায়।

NEWS24-BENGALI.COM

NEWS24-BENGALI.COM brings to provide the latest quality Bengali News(বাংলা খবর, Bangla News) on Crime, Politics, Sports, Business, Health, Tech, and more on Digital Platform.

Copyright © 2024 NEWS24-BENGALI.COM | All Rights Reserved.

google-news