Table of Contents
ভারতের জাতীয় পতাকা, যাকে আমরা শ্রদ্ধার সাথে তেরঙ্গা বলে থাকি, এটি কেবল একটি পতাকা নয়। এটি আমাদের জাতির গর্ব, স্বাধীনতা এবং আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের আত্মত্যাগের প্রতীক। এটি প্রতিটি ভারতীয়ের জন্য গর্বের বিষয়। কিন্তু আপনি কি জানেন এই পবিত্র পতাকাটি কে ডিজাইন করেছিলেন এবং এর প্রতিটি রঙের গভীর অর্থ কি ?
জাতীয় পতাকার জনক: পিঙ্গালি ভেঙ্কাইয়া
আমাদের বর্তমান পতাকার নকশাটি ১৯২১ সালে পিঙ্গালি ভেঙ্কাইয়া কর্তৃক তৈরি নকশার উপর ভিত্তি করে তৈরি। পিঙ্গালি ভেঙ্কাইয়া একজন সাধারণ ব্যক্তি ছিলেন না বরং অসাধারণ ব্যক্তিত্বের অধিকারী একজন ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামী ছিলেন। তিনি একজন প্রভাষক, লেখক, ভূতাত্ত্বিক, শিক্ষাবিদ, কৃষিবিদ এবং বহুভাষিকও ছিলেন। তিনি অনেক পতাকার নকশায় কাজ করেছিলেন এবং অবশেষে মহাত্মা গান্ধীর পরামর্শে তিনি এমন একটি পতাকা ডিজাইন করেছিলেন যা ভারতের পরিচয় হয়ে উঠতে পারে। তার প্রাথমিক নকশায় লাল এবং সবুজ রঙ ছিল, যা যথাক্রমে হিন্দু এবং মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব করে। পরবর্তীতে, মহাত্মা গান্ধীর নির্দেশে, একটি সাদা ডোরা এবং একটি চরকাও এতে যুক্ত করা হয়েছিল।
তেরঙ্গার ঐতিহাসিক যাত্রা
ভারতীয় জাতীয় পতাকার বর্তমান রূপটি একটি দীর্ঘ যাত্রার ফলাফল। এই যাত্রা শুরু হয়েছিল ১৯০৬ সালে, যখন কলকাতায় প্রথম জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়েছিল। এই পতাকাটি ছিল স্বদেশী আন্দোলনের প্রতীক। এর পরে, ১৯০৭ সালে, ম্যাডাম ভিকাজি কামা জার্মানির একটি আন্তর্জাতিক মঞ্চে কিছু পরিবর্তন করে দ্বিতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। ১৯১৭ সালে, অ্যানি বেসান্ত এবং বাল গঙ্গাধর তিলক হোম রুল আন্দোলনের জন্য একটি পৃথক পতাকা তৈরি করেছিলেন, যার নয়টি অনুভূমিক ডোরা ছিল।
এই যাত্রায় একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় আসে যখন ১৯২১ সালে পিঙ্গালি ভেঙ্কাইয়া মহাত্মা গান্ধীকে সাদা, সবুজ এবং লাল ডোরাযুক্ত একটি পতাকার নকশা দেখান। ১৯৩১ সালে, এই পতাকায় কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছিল এবং চরকাটি এর কেন্দ্রে স্থাপন করা হয়েছিল, যা আজকের তেরঙ্গার মতো দেখতে ছিল। অবশেষে, ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার পর, রাজেন্দ্র প্রসাদের নেতৃত্বে একটি কমিটি একই পতাকা গ্রহণ করে, কিন্তু চরকাটির পরিবর্তে ধর্মচক্র ব্যবহার করে, যা আইন, ন্যায়বিচার এবং ধার্মিকতার প্রতীক হয়ে ওঠে।
ত্রিবর্ণ রঙের অর্থ
আমাদের জাতীয় পতাকায় তিনটি রঙ এবং একটি চক্র রয়েছে এবং এই সকলেরই নিজস্ব বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে:
গেরুয়া (উপরে): এই রঙ সাহস এবং ত্যাগের প্রতীক। এটি আমাদের দেশের প্রতি নিঃস্বার্থ সেবা এবং আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের ত্যাগের কথা মনে করিয়ে দেয়।
সাদা (মাঝে): এই রঙ শান্তি, সত্য এবং পবিত্রতার প্রতীক। এটি আমাদের এই বার্তা দেয় যে আমাদের সর্বদা সত্য ও নীতির পথ অনুসরণ করা উচিত।
সবুজ (নীচে): এই রঙটি সবুজ, বৃদ্ধি এবং আমাদের দেশের ভূমির মঙ্গলকে নির্দেশ করে। এটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে ভারত একটি কৃষিপ্রধান দেশ এবং মাটিতে জীবন রয়েছে।
অশোক চক্র (মাঝে): সাদা ডোরার মাঝখানে অবস্থিত ২৪টি ডোরাযুক্ত নীল রঙের অশোক চক্র ধর্মের চক্রের প্রতীক। এটি ইঙ্গিত করে যে, গতিতে জীবন রয়েছে এবং স্থবিরতায় মৃত্যু রয়েছে। এর ২৪টি দাগ দিনের ২৪ ঘন্টার প্রতিনিধিত্ব করে, যা আমাদের সর্বদা প্রগতিশীল থাকার বার্তা দেয়।