ওয়েব ডেস্ক: আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহার করছে আমেরিকা। ফের হারানো জমি উদ্ধার করতে কোমর বেঁধে লড়াই শুরু করেছে তালিবান। তালিবানের দাবি, ইতিমধ্যেই দেশের ৮৫ শতাংশ এখন তাদের হাতের মুঠোয়। মার্কিন গোয়েন্দা রিপোর্ট বলছে, মার্কিন সেনা সরানোর ছ’মাসের মধ্যেই গোটা আফগানিস্তান তালিবানের দখলে চলে যেতে পারে। অথচ মার্কিন প্রেসিডেন্ট সেই রিপোর্ট কার্যত নস্যাৎ করেই জানিয়ে দিয়েছেন তাঁদের ‘মিশন আফগানিস্তান’ শেষ হচ্ছে ৩১ অগাস্ট।
আফগানিস্তান কি তাহলে ফের তালিবানের দখলে চলেজাবে, এমন একটা প্রশ্নের মুখে যখন কার্যত দিশেহারা কাবুল। আন্তর্জাতিক মঞ্চে এই পটপরিবর্তনে রীতিমতো উদ্বিগ্ন নয়াদিল্লী। এহেন পরিস্থিতিতে রাশিয়ার বিদেশ মন্ত্রী সের্গেই লাভরভের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ভারতের বিদেশ মন্ত্রী এস জয়শংকর। তাঁদের আলোচনায় উঠে আসে আফগানিস্তান প্রসঙ্গ। পরে যৌথ বিবৃতিতে বললেন, ‘আমাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি কথা হয়েছে আফগানিস্তান নিয়েই। আঞ্চলিক সুস্থিতি এবং নিরাপত্তার স্বার্থে এই মুহূর্তে আফগানিস্তানে হিংসা থামানোর কাজই সবচেয়ে জরুরি। আর সে ক্ষেত্রে ভারত ও রাশিয়াকে একজোট হয়ে কাজ করতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, “যদি আফগানিস্তান ও তার আশপাশে শান্তি স্থাপন করতে হয়, তাহলে ভারত ও রাশিয়াকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। ওই দেশে এখনও পর্যন্ত সামাজিক, অর্থনৈতিক ও গণতান্ত্রিক হওয়া উন্নতি ধরে রাখতে হবে।” বিশ্লেষকদের মতে, আফগানিস্তান থেকে মার্কিন ফৌজ সরে গেলে তালিবানের কাবুল দখল সময়ের অপেক্ষা মাত্র। আর তেমনটা হলে রীতিমতো বিপাকে পড়বে ভারত। কারণ, সেখানে ভারতীয় সংস্থাগুলিকে নিশানা করবে পাক মদত-পুষ্ট জঙ্গি সংগঠনগুলি। আফগান ভূম থেকে তালিবানের মদতে কাশ্মীরে সন্ত্রাস ছড়িয়ে দেবে আইএসআই।
শুরু চিন আফগানিস্তানের নতুন সমীকরণ, চিন্তাই ভারত
প্রসঙ্গত, ২০০১ সালের ৯/১১ হামলার পর ‘মিশন আফগানিস্তান’ শুরু করে মার্কিন ফৌজ। তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ জুনিয়রের নেতৃত্বে বিশ্ব সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করে আমেরিকা। আফগান মিলিশিয়াদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে মাস খানেকের লড়াইয়ের পর তালিবানকে কাবুল থেকে বিতাড়িত করে মার্কিন ফৌজ। কিন্তু তারপর পরিস্থিতি পালটেছে। প্রায় দুই দশক কেটে গেলেও তালিবানের বিনাশ সম্ভব হয়নি। আর লাগাতার যুদ্ধে অর্থনৈতিক চাপের মুখে পড়েছে ওয়াশিংটন। ফলে তালিবানের সঙ্গে শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর করে এবার দেশটি থেকে সেনা প্রত্যাহার করছে হোয়াইট হাউস। আগে প্রেসিডেন্ট বাইডেন জানিয়েছিলেন যে সেপ্টেম্বর মাসের ১ তারিখের মধ্যে সেনা প্রত্যাহার শেষ হবে।
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, পরিস্থিতির উপর আগাগোড়া নজর রাখলেও ভারত কখনও সরাসরি তালিবান মোকাবিলা বা জঙ্গিদের সঙ্গে শান্তি-বৈঠকের ব্যাপারে এগিয়ে আসেনি। US প্রেসিডেন্ট সরাসরি তা স্বীকার না করলেও বৃহস্পতিবার বাইডেন এক সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, ‘আমরা কোনও দিনই দেশ পুনর্গঠন করতে আফগানিস্তানে যাইনি। নিজেদের ভবিষ্যৎ ঠিক করার দায়িত্ব ওঁদেরই। এর মধ্যে তো ভুল কিছু নেই! আফগানিস্তানে যুদ্ধ করে কাটানোর কোনও মানেই হয় না। এতে কোনও সমাধানসূত্র বেরোবে না।
কোভিডবিধি মেনে এবারেও হবে দুর্গা পুজো, কী কী ব্যবস্থা থাকছে
বিশেষজ্ঞদের মতে তালিবান ফের কাবুল কব্জা করে নিলে বিপাকে পড়বে ভারত। এলাকায় স্থিতাবস্থা তো ভেঙে পড়বেই, ভারতীয় সংস্থাগুলিকেও নিশানা করতে পারে পাক সমর্থনপুষ্ট জঙ্গিরা। সেই কারণেই কূটনৈতিক দৌত্যে জয়শঙ্কর তিন দিনের সফরে এখন রাশিয়ায়। রুশ প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি বলেন, ‘যারাই আফগানিস্তান শাসন করুন, তাদের মধ্যে একটা বৈধতা থাকা দরকার। অবৈধ ভাবে একটা দেশ চলতে পারে না।’ ভারত ও রাশিয়া একজোট হয়ে গণতান্ত্রিক, ঐক্যবদ্ধ এবং স্বাধীন-সার্বভৌম আফগানিস্তান গড়ার লক্ষ্যে তৈরি বলেও দাবি করেন তিনি।