এবার কি ‘বিজেমূল’ তত্ত্ব খারিজের পথে CPIM ?

by Chhanda Basak

ওয়েব ডেস্ক: ইতিহাসে এই প্রথম ডাহা ফেল করেছে CPIM। ১৯৭৭ সালের পর থেকে বিধানসভা নির্বাচনে সবচেয়ে খারাপ ফল করল তারা। পাকা চুলের বদনাম ঝেড়ে ফেলতে এবারের নির্বাচনে নজিরবিহীনভাবে যুবদের জায়গা দিয়েছিলেন আলিমুদ্দিন নেতৃত্ব। কিন্তু, সেই ফর্মুলাও কার্যত ব্যাকফুটে। তাই, ভোটের ঝুলিতে ‘শূন্য’ অঙ্ক নিয়ে মুখ ব্যাজার করে থাকতে দেখা গেল ৩৪ বছর সরকারে থাকা একটি দলকে। দরকারে পেলেও বাংলার মানুষ যে তাঁদের আর সরকারে চায় না, তা হারে হারে স্পষ্ট হল ২১-এর ফলাফলে।

Cpim may withdraw the bijemool concept and now onwards protest separately against bjp and tmc

২০২১ এর বিধানসভা নির্বাচনে বামেদের মূল তত্ত্ব ছিল যাহা BJP তাহাই তৃণমূল। আলাদা কিছু নয়। দু’টি পার্টি একই। ‘ওরা বিজেমূল’। ২১-এর বিধানসভা নির্বাচনের আগে এই তত্ত্ব নিয়েই গেরুয়া ও ঘাসফুল শিবিরের বিরুদ্ধে প্রচার চালিয়েছিল বামফ্রন্ট। প্রার্থীর সমর্থনে দেওয়াল লিখন হোক কিংবা CPIM ছাত্র-যুবদের প্যারোডি গান। সব জায়গাতেই সামনে আনা হয়েছিল ‘বিজেমূল’ তত্ত্বকে।

আলিমুদ্দিনের অন্দরে চর্চা শুরু হয়েছে হারের জন্য ‘বিজেমূল’ তত্ত্ব দায়ী। তাই এই বিষয়টি এবার পত্রপাঠ খারিজ করতে চলেছে বামফ্রন্ট। সমালোচকদের মতে, BJP ও তৃণমূল দুইয়ের বিরুদ্ধেই আলাদা আলাদা ভাবে লড়াই মানুষের মধ্যে গ্রহণযোগ্যতা বাড়াত। কিন্তু এই ‘বিজেমূল’ তত্ত্ব টি মানুষ ঠিক বুঝে উঠতে পারিনি।

চাকুরী জীবী দের জন্য দুঃসংবাদ, কমতে পারে টেক হোম স্যালারি

জানা গিয়েছে, ‘বিজেমূল’ তত্ত্ব খারিজ করতে চলেছে বামফ্রন্টের প্রধান শরিক CPIM। ফলাফল পরবর্তী পর্যালোচনায়, CPIM রাজ্য কমিটি কার্যত স্বীকার করে নিয়েছে, প্রতিপক্ষ হিসেবে BJP ও তৃণমূলের প্রতি সমদূরত্বের নীতি আমজনতা গ্রহণ করেনি। বরং পার্টির সঙ্গে জনতার বিচ্ছিন্নতা তৈরি হয়েছে। জানা গিয়েছে, সূত্র মারফৎ জানা গেছে বুধবার রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠক বসতে চলেছে। সেখানে মূলত এই বিষয়টাই উত্থাপন করবে CPIM। শুধু তাই নয়, আগামী ফ্রন্টের বৈঠকে এই মর্মে শরিকদের সঙ্গেও আলোচনা করবে।

ট্রেনের পর এবার খেলার মাঠ ও স্টেডিয়ামগুলিও বিক্রির সিদ্ধান্ত রেলের

ভোটের আগে দলবদল কারীদের দেখেই মূলত ‘বিজেমূল’ শব্দের প্রয়োগ শুরু করেছিল বামফ্রন্ট। ক্রমেই তা সংযুক্ত মোর্চার ট্যাগলাইন হয়ে ওঠে। একযোগে আক্রমণ শুরু হয় দুই পার্টিকে। আর এই প্রচারই বুমেরাং হয়েছে বলে মত রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের। কে প্রধান আর কে অপ্রধান প্রতিপক্ষ চিহ্নিত করতে ব্যর্থ হয় বাম দলগুলি। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, একদিকে অন্ধ তৃণমূল বিরোধিতায় লোকসভাই নিজেদের ভোটের একটা সিংহভাগ পদ্ম শিবিরে গিয়েছিল। তাঁদের কমিটেড ভোটাররা নাকি তৃণমূলকে শায়েস্তা করতে BJP-কে বেছে নিয়েছে বলে মন্তব্য করেন খোদ পার্টির নেতারাই। এবারেও ফের BJP-র মতো সাম্প্রদায়িক শক্তিকে রুখতে তাই ‘কম শত্রু’ তৃণমূলকে ভোট দিয়েছে পার্টির সিংহভাগ সমর্থক।

ট্রেনের পর এবার খেলার মাঠ ও স্টেডিয়ামগুলিও বিক্রির সিদ্ধান্ত রেলের

সূত্রের খবর, ভোটের ফল বিশ্লেষণ করতে গিয়ে CPIM-এর অন্দরে কড়া সমালোচিত হয়েছে মোদীভাই-দিদিভাই তত্ত্ব। আম জনতা এই বক্তব্য বাতিল করে দিয়েছে বলেও পর্যালোচনায় উঠে আসে। CPIM বা বামফ্রন্টের বাইরে থাকা একটা বাম মনো-ভাবাপন্ন জনগোষ্ঠী ‘নো ভোট টু BJP’ প্রচারেই সিলমোহর দিয়েছেন। ২০১৬ সালে বামেরা যে ৩২টি আসন পেয়েছিল, এবার তার মধ্যে ৯টি BJP এবং ২৩টি আসন গিয়েছে তৃণমূলের দখলে।

ডেল্টা প্রজাতি রুখতে কমাতে হবে টিকাকরণের ব্যবধান, ল্যানসেটের সমীক্ষায় অস্বস্তিতে কেন্দ্র

নির্বাচন পরবর্তী রাজ্য কমিটির অধিবেশনে এই রক্তক্ষরণ কার্যত স্বীকার করে নিয়েছে ফ্রন্টের শীর্ষ নেতৃত্ব। আর তাই আলিমুদ্দিন কর্তারা এখন ‘বিজেমূল’-এর তত্ত্ব সরিয়ে রেখে গেরুয়া ও ঘাসফুল শিবিরকে আলাদা আলাদা প্রতিপক্ষ হিসাবে বিচার করার আলাদা রকম ভাবে লড়াই করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এখন দেখার রাতারাতি ভাইরাল হওয়া এই ট্যাগলাইন ঝেড়ে ফেলে নতুন পরিকল্পনা নিয়ে মানুষের কাছে কিভাবে কত দ্রুত গ্রহণযোগ্য বাড়াতে পারে বামেরা?

Copyright © 2024 NEWS24-BENGALI.COM | All Rights Reserved.

google-news