ওয়েব ডেস্ক: কলকাতা পুরনির্বাচনের শুরু থেকেই বামেদের বেশ আত্মবিশ্বাসী মনে হয়েছিল বিশ্লেষকদের। সকলের আগে একবারে সম্পূর্ণ প্রার্থী তালিকা প্রকাশ, মানুষের দৈনন্দিন সমস্যাকে নিজেদের ইস্তেহার প্রাধান্য দেওয়া এবং চিরাচরিত পদ্ধতিতে নিজেদের ইস্তেহার প্রকাশ করার বদলে সোশাল মিডিয়াকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের ইস্তেহারকে নতুন রূপে আরও বেশি মাত্রায় নতুন ভোটারদের কাছে পৌঁছে যাওয়া। রেড ভলেন্টিয়ার ফোর্সকে কাজে লাগিয়ে তাদের মধ্য থেকে প্রার্থী তুলে আনার মধ্য দিয়ে চমক দেওয়ার চেষ্টা করে তারা।
২০০০ সালে কলকাতা পুরসভা তৃণমূল দখল করে নিলেও পাঁচ বছর পরে ২০০৫-এ ফের তা ছিনিয়ে নিয়েছিল বামেরা। মেয়র হয়েছিলেন সিপিএমের বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য। কিন্তু সেই বামফ্রন্ট আর নেই। সেই সিপিএমও নেই। তবে আছে। লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচনে রাজ্যে খাতা খুলতে না পারা সিপিএম তথা বামেরা দেখিয়ে দিল তারা রয়েছে কলকাতায়। বিরোধী হিসেবে আসন সংখ্যায় না হলেও বিজেপি বা কংগ্রেসের থেকে প্রাপ্ত ভোটে এগিয়ে বামেরা।
সামান্য কিছু ভোটের জন্য বামেদের হাতছাড়া হল বেশ কয়েকটি ওয়ার্ড
বিধানসভা ভোটের হিসেবে, কলকাতা পুরসভার ১৪৪ টি ওয়ার্ড অঞ্চলে তৃণমূলের ভোট ছিল ৫৯.০৩ শতাংশ। সেখানে বিজেপির ভোট ছিল ৩২.৯২ শতাংশ। বামেদের ভোট ছিল ৪ শতাংশ। কলকাতা পুরভোটের ফলাফলের ট্রেন্ডে দেখা গেছে তৃণমূলের ভোট বেড়ে হয়েছে ৭১ শতাংশ এবং বিজেপির ভোট কমে হয়েছে ৮.৯ শতাংশ। অর্থাৎ বিজেপি-র ভোট কমেছে প্রায় ২৩ থেকে ২৪ শতাংশ। এই ২৩ থেকে ২৪ শতাংশ ভোটের একটা সিংহভাগ অংশ তৃণমূলের দিকে গেলেও একটি উল্লেখযোগ্য অংশ এসেছে বামেদের দিকে। ফলত বামেদের ভোট শতাংশ ৪ থেকে বেড়ে হয়েছে ১১.৪ শতাংশ। অর্থাৎ প্রায় ৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে তাদের ভোট।
মমতার গড়ে কঠিন লড়াই বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যের ভাইপো অর্করঞ্জনের
কলকাতা পুরভোটে সিপিএম এবং সিপিআই একটি করে আসনে জিতেছে। তবে সব ক’টিতে অর্থাৎ ১৪৪টিতেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেনি বামেরা। ১২৮ আসনে প্রার্থী দিয়ে দুই ওয়ার্ডে জয়ী আর ৬৫ টি ওয়ার্ডে দ্বিতীয় স্থানে। সেখানে বিজেপি ১৪২ আসনে লড়াই করে জিতেছে তিনটিতে আর দ্বিতীয় হয়েছে ৫৪টি ওয়ার্ডে। প্রসঙ্গত, বিজেপি ১৪৪টি আসনে প্রার্থী দিলেও পরে দু’জন মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেন।
ভেঙেছে বাম হাত, অস্ত্রোপচার করাতে গিয়ে ডাক্তার কেটে বাদ দিলেন ডান হাত
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, রাজ্যে সিপিএমের ভোট প্রাপ্তির পারদ নিম্নগামী হতে শুরু করে ২০০৬ সাল থেকেই। সে বার প্রাপ্তি ছিল ৩৭.৯৩ শতাংশ ভোট। আর সেটা ২০১১ সালে কমে হয় ৩০.০৮ শতাংশ। এর পরে ২০১৪ ও ২০১৬ সালে কমে হয় যথাক্রমে ২২.৯৬ ও ১৯.৭৫ শতাংশ। এর পরে এক অঙ্কের সংখ্যায় নেমে যায়। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে ভোট প্রাপ্তি ছিল ৬.৩৪ শতাংশ। গত বিধানসভা নির্বাচনে সেই হার আরও কমে হয় ৪.৭০ শতাংশ।
পুরসভা নির্বাচনে সন্ত্রাসের অভিযোগ, কলকাতা হাইকোর্টে মামলা বাম বিজেপির
সিপিআই(এম) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেন, সব রাজনৈতিক দলকেই নিজেদের মত করে এগোতে হয়। যেভাবে রাজ্যে TMC এবং দেশে BJP চলছে তার বিরুদ্ধে লক্ষ ছিল তাদেরকে হারানো। এখানে একা অথবা দোকার বিষয় নয়। এখানে TMC-র বিরুদ্ধে বিকল্প হিসেবে BJP-কে তুলে আনার যে প্রচেষ্টা হচ্ছে তা যে ঠিক নয়, এটা তার প্রমাণের শুরু। অন্যদিকে তিনি আরও বলেন যে এই পার্সেন্টেজ ঠিক নয়। ঠিক ভোট হতে দেওয়া হয়নি এবং ভোট হলে ফলাফল আরও অনেক ভাল হত বলে তিনি মনে করেন।
