ডিজিটাল ডেস্ক: খাদ্য আন্দোলনে শহীদদের সরণে ৩১ অগাস্ট ছিল বামেদের সভা। তখন অঝোরে বৃষ্টি পড়ছে ধর্মতলা জুড়ে। তার মধ্যেই একের পর এক মিছিল এসে জমছে ধর্মতলা চত্বরে। মঞ্চে তখন বাম নেতৃত্ব বসে। দক্ষিণবঙ্গের নেতা কর্মীরা মূলত এদিনের সভায় যোগ দিতে এসেছিলেন। বৃষ্টির মধ্যেই শিয়ালদহ, হাওড়া-সহ পাঁচটি জায়গা থেকে মিছিল নিয়ে ধর্মতলা চত্বরে আসেন সুজন চক্রবর্তী, কনীনিকা ঘোষ, মধুজা সেন রায়-সহ বাম নেতা-নেত্রীরা।
উত্তরবঙ্গে জেলায় জেলায় এই সভা করতে বলা হয়েছিল ফ্রন্টের পক্ষ থেকে। ধর্মতলায় বামেদের সমাবেশ করতে অনুমতি দিতে চাইনি পুলিশ। পুলিশের তরফে রাণী রাসমণি অ্যাভিনিউ বা ওয়াই চ্যানেলে সমাবেশ করার প্রস্তাব দেওয়া হলে তা মানতে চাইনি বামেরা। শেষ পর্যন্ত জওহরলাল নেহরু রোডের উপরে পাঁচ তারা হোটেলের উল্টো দিকে ম্যাটাডোরের উপরে অস্থায়ী মঞ্চ করে সমাবেশ হয়েছে। প্রবল দুর্যোগের মধ্যেও সমাবেশে ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো।
খাদ্য আন্দোলন কি? খাদ্য আন্দোলনে ১৯৫৯ সালের ৩১ অগাস্ট এই রকমই প্রবল বৃষ্টির মধ্যে ভুখা জনতার মিছিল হয়েছিল। রাজভবন পেরিয়ে বিবাদি বাগের দিকে যাওয়ার পথে পুলিশ লাঠি চালিয়েছিল, এতে মৃত্যু হয়েছিল ৮০ জনের।
শুরুতেই বক্তব্য পেশ করে বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু বলেন, ‘‘১৯৫৯ সালের আজকের দিনে খাদ্যের দাবিতে মিছিল করেছিল বামেরা। পুলিশের আক্রমণে বহু মানুষের প্রাণ গিয়েছিল। সেদিনের সঙ্গে আজকের মিল হল সেদিনও বৃষ্টি হয়েছিল। আজও বৃষ্টি হল। সেদিন ধর্মতলার শহিদ মিনার থেকে হাজার হাজার মানুষের মিছিল গিয়েছিল রাজভবনের দিকে। পুলিশ মিছিলকে এগোতে দেয়নি। আবার গ্রেফতারও করেনি। মিছিল দাঁড়িয়েছিল দেড়-দু-ঘণ্টা। সবাই ছাতা মাথায় দাঁড়িয়ে ছিল। সেদিনের সেই ছবি একটি ছাতা কোম্পানি বিজ্ঞাপন হিসেবে বহুদিন ব্যবহার করেছিল।’’
এরপরই বিজেপি ও তৃণমূলকে একযোগে আক্রমণ করে ফ্রন্ট চেয়ারম্যান বলেন, ‘‘এখন সময়টা ভাল না। দিল্লিতে আরএসএস পরিচালিত বিজেপির সরকার চলছে। এরাই কংগ্রেস ভেঙে তৃণমূল করেছে। আবার এই তৃণমূল আবার রাজ্যে বিজেপিকে টেনে এনেছে। বিজেপিকে রুখতে হবে। তৃণমূলকেও পরাস্ত করতে হবে। জ্যোতিবাবু বলতেন তৃণমূলের বড় অপরাধী তাঁরা রাজ্যে বিজেপিকে এনেছে। বিজেপি তৃণমূলের বিরুদ্ধে আর বিজেপি তৃণমূলের বিরুদ্ধে বললে সবাই জানতে পারে, কিন্তু বোঝাপড়া করলে কেউ জানতে পারে না।’’
আরও পড়ুন : তেহট্ট সমবায় সমিতির ভোটে বাম ঝড়ের সামনে ধরাশায়ী তৃনমূল
সিপিআইএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম জানিয়েছেন, ‘‘যখন সংসদে ছিলাম বলেছি। দক্ষিণ-পন্থীরা বললেন লাল হটাও। কিন্তু আমরা বলব। মানুষের জন্য রাস্তায় দাঁড়িয়ে বলব। শ্যামা-প্রসাদ মুখোপাধ্যায় যখন খাদ্য-মন্ত্রী ছিলেন কালোবাজারি হয়েছিল। আবার এখনও সেই কাজ শুরু হয়েছে। মায়েদের পুষ্টি চুরি হচ্ছে। বালি, কয়লা চুরির মতো।’’
এরপর সিপিআইয়ের রাজ্য সম্পাদক স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায় বক্তব্য পেশ করতে গিয়ে বলেন, “আমাদের সভার অনুমতি দেয়নি পুলিশ। কোনও পরোয়া নেই। বিধানসভায় আমাদের প্রতিনিধি নেই কোনও পরোয়া নেই। আমরা রাস্তায় আছি। আর এতো মানুষ দুর্যোগ উপেক্ষা করে এখানে এসেছে। এটাই আমাদের শক্তি।”
আরও পড়ুন : ধুপগুড়ি উপ নির্বাচনে তৃণমূলকে হারাতে একসঙ্গে অধীর-সেলিম
বৃষ্টির জন্য সভার কাজ দ্রুত শেষ করার কথা ঘোষণা করছিলেন বিমান বসু। সেই সময় সভা চালিয়ে যাওয়ার দাবি ওঠে দর্শক শ্রোতাদের মধ্যে থেকে। বক্তব্য রাখতে বলা হয় সিপিআইএমের রাজ্য কমিটির সদস্য ও ডিওয়াইএফআইয়ের রাজ্য সম্পাদক মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়কে। তিনি বলেন, ‘‘কেন্দ্রে বিজেপি এবং রাজ্যে তৃণমূল দুই দলেই ধ্বস নামছে। মানুষের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে। চাষের জমি কমে আসছে। আর মানুষের খাদ্যে হাত পড়ছে। বামপন্থীরা এর বিরুদ্ধে লড়াই করতে ময়দানে থাকবে।’’ ‘যারা কাজ ও খাদ্যের অধিকার লুট করেছে, পঞ্চায়েতে ভোট লুট করেছে, তাদের সকলকে জেলে না পোরা পর্যন্ত লড়াই থামবে না।’’