কলকাতা। বামেদের ভোট দিয়ে লাভ নেই, তাদের ভোটে দেওয়া মানে ভোটে নষ্ট করা, তারা জিততে পারবে না! গত লোকসভা ভোটের সময় থেকেই বামেদের সম্পর্কে এই ধরনের প্রচার চালানো হচ্ছে, এইবার এর মোকাবিলা করতেই অবশেষ মাঠে নামলেন বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু।
তাঁর আক্রমণের তির মূলত BJP র দিকে। কারণ বেশ কিছুদিন আগে প্রকাশ্য জনসভা থেকে BJP নেতা শুভেন্দু অধিকারীকে বাম সমর্থক দের উদ্দেশে বলতে শোনা গিয়েছিল যে তারা যেন BJP কে ভোটে তাদের ভোটে তা দেন, তেমনি কিছুদিন আগে মমতা ব্যানার্জিও তার প্রকাশ্য জনসভা থেকে বাম সমর্থক দের প্রতি একই আবেদন করেন। তাই মানুষের কাছে বিমান বসুর আবেদন, তাঁরা ভোট দিলেই বাম-সহ গণতান্ত্রিক শক্তি জিতবে এবং BJP ও তৃণমূলের বিকল্প সংযুক্ত মোর্চার সরকার তৈরি হবে।
জোট-সঙ্গী কংগ্রেস, ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট (ISF) এবং বামফ্রন্টের শরিক নেতাদের পাশে নিয়ে বুধবার আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে সংযুক্ত মোর্চার তরফে যৌথ আবেদন প্রকাশ করেছেন বিমান বসু। যে আবেদনে বলা হয়েছে, ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, ধর্মনিরপেক্ষতা রক্ষা, দুর্নীতিমুক্ত স্বচ্ছ সরকার গড়তে সংযুক্ত মোর্চাকে জয়ী করুন’। এই প্রসঙ্গেই বিমান বসু বলেছেন, ‘‘বামেদের ভোট দিয়ে কি হবে, তারা জিততে পারবে না— এই প্রচার গত লোকসভা ভোটের সময় থেকে শুরু হয়েছে। ‘আগে রাম, পরে বাম’— এই রকম প্রচারও চালানো হচ্ছে। এর কোনটারই বাস্তব ভিত্তি নেই। মূলত BJPর আইটি সেলের কাজ এই ধরনের প্রচার।’’ কখনও কখনও তৃণমূলও বলছে, বামেদের দিয়ে ভোট ‘নষ্ট’ না করে তাদের সমর্থন করাই ভাল। বিমান বসুর মতে, ‘‘মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য এই চেষ্টা চলছে। কিন্তু সত্যটা সত্যই থাকে, মিথ্যা সত্য হয়ে যায় না!’’
বিমান বসু দের সহজ যুক্তি, ভোটারদের সমর্থন পেলেই কোনও দল সরকার গড়তে পারে। আগে থেকেই ‘জিততে পারবে না’র ধারণা তৈরি করা হচ্ছে কখনও BJP, কখনও তৃণমূলের সুবিধার জন্য। ঘটনা হল, লোকসভা ভোটে বামেদের পুরনো ভোটের বড় অংশই BJP তে গিয়েছিল।
বামেরা সামাজিক মাধ্যমে এখন যথেষ্ট সক্রিয়। তারা কি BJP র আইটি সেলের প্রচারের মোকাবিলা করতে পারছে না? বিমান বসুর বক্তব্য, ‘‘সব জবাব কি সামাজিক মাধ্যম দিয়ে হয়? মাঠে-ময়দানে সংযুক্ত মোর্চার প্রার্থী এবং কর্মীরা বলছেন, কেন BJP কে রুখতে হবে, কেন তৃণমূলকে পরাস্ত করতে হবে। বাসে-ট্রেনে-নৌকায় নানা রকম পদ্ধতিতে প্রচার চলছে। সেগুলো তো শুনতে হবে।’’
শুক্রবার মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়ের সমর্থনে নন্দীগ্রামে জনসভা উপস্থিত থাকবেন আব্বাস সিদ্ধিকি
মোর্চার যৌথ আবেদনে কোথাও ইমাম ভাতা, ধর্মীয় অনুদান বা মন্দির-মসজিদ গড়ার কথা নেই। কর্মসংস্থান এবং সামাজিক ন্যায়েই জোর দেওয়া হয়েছে সেখানে। এই আবেদন সামনে রেখেই বাম নেতারা বলছেন, তাঁরা কোনও ভাবেই সাম্প্রদায়িক শক্তির হাত ধরে ধর্মনিরপেক্ষতার সঙ্গে আপস করেননি। বিমানবাবুর মন্তব্য, ‘‘ISF একটি মৌলবাদী সংগঠন, এই প্রচারও বেশি করে ছড়িয়েছে BJP র আইটি সেল। এই আবেদনে কোথাও কি সাম্প্রদায়িকতামূলক কথা বা দাবি আছে? মৌলবাদী হলে কি ISF ের প্রার্থী তালিকায় তফসিলি জাতি-জনজাতি, বন্দ্যোপাধ্যায়-চট্টোপাধ্যায়েরা থাকতেন?’’
ISF যোগ দিয়েছেন লেখক ও তথ্যচিত্র নির্মাতা সৌমিত্র ঘোষ দস্তিদার। বিমান বসু পাশে বসেই তিনি এ দিন বলেছেন, ‘‘ISF কোনও দল নয়, বিভিন্ন সংগঠনের একটা মঞ্চ। তারা বহুজনের রাজনীতি, ভূমিপুত্রদের অধিকারের কথা বলছে। গণতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, দুর্নীতিমুক্ত বাংলা গড়ার লক্ষ্যে সংযুক্ত মোর্চা লড়ছে। ISF এর সঙ্গে আলোচনা করতে অনেকেই আসতে পারেন। কিন্তু নীতি থেকে আমরা সরব না।’’
বিগত কয়েকটি ভোট লক্ষ্য করলে দেখা যাবে যে দিন দিন বামেদের পূরণ ভোট ব্যাংক ধীরে ধীরে BJP এর দিকে চলে গেছে। এখন এইটা দেখার যে বামেরা এবার তাদের পুরন ভোটে ব্যাংক ফিরে পাই কিনা।