ওয়েব ডেস্ক: উত্তরপ্রদেশ থেকে এবার প্রাকৃতিক গ্যাসের পাইপলাইন প্রস্তাবিত এলাকায় ছড়িয়ে দিতে জোরকদমে নামল রাজ্য সরকার। বিধানসভা ভোটের জন্য সেই কাজ পুরোপুরি থমকে গিয়েছিল। এ বার CNG আনতে অক্টোবরের মধ্যেই যাতে পাইপলাইন বসানো যায়, সে জন্য জেলাশাসকদের দ্রুত জমিজট নিষ্পত্তির নির্দেশ দিল নবান্ন।
উত্তরপ্রদেশের জগদীশপুর থেকে এই পাইপলাইন দুর্গাপুরে এসে পৌঁছেছে। সেখানকার কয়েকটি সার কারখানাকেও জ্বালানি হিসেবে এই গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। GGL-ই তা কলকাতা পর্যন্ত নিয়ে আসবে। শিলিগুড়ি পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হবে ওই পাইপলাইন। শিলিগুড়ি দিয়ে এই পাইপলাইন উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলিতে প্রবেশ করবে। রাজ্য সরকারও তাই এই গ্যাস পাইপলাইন কলকাতায় আনতে তৎপর হয়েছে। এই পাইপলাইনে আসা পরিবেশ বান্ধব প্রাকৃতিক গ্যাস শুধুমাত্র রান্নার জন্য নয়, যানবাহনের জ্বালানি হিসেবেও হিসেবে ব্যবহার করা হবে।
শনিবার মুখ্য-সচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী কেন্দ্রীয় সংস্থা গেইল এবং উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের ১০ জেলার জেলাশাসকদের সঙ্গে এ নিয়ে ভার্চুয়াল বৈঠক করেন। যদিও উত্তর ২৪ পরগনা, নদীয়া-সহ একাধিক জেলার জেলাশাসকরা বৈঠকে গেইলের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। নবান্ন সূত্রে খবর, বৈঠকে উত্তর ২৪ পরগনার জেলাশাসক সুমিত গুপ্তা জানান, আমডাঙা, ব্যারাকপুরের ৩০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বসবে পাইপলাইন। এর জমি নিয়ে কিছুটা সমস্যা রয়েছে।
মুখ্য-সচিব জেলাশাসকদের নির্দেশ দেন, দ্রুত বৈঠক করে এই জমিজট মিটিয়ে ফেলতে হবে। গেইল কর্তাদেরও মুখ্য-সচিব বলেন, ‘শুধু দিল্লি থেকে চিঠি লিখে সহযোগিতা করছে না বললে হবে না। জেলাশাসকদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখুন। তাঁদের অনেক কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হয়। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চান, স্বচ্ছতার সঙ্গে দ্রুত এই প্রকল্প রূপায়ণ হোক।’
সূর্যকান্তের ‘বিজেমূল তত্ত্ব’ নয়, দলের সাংগঠনিক দুর্বলতাকেই হারের কারণ হিসাবে দায়ী করলেন সুশান্ত ঘোষ
প্রসঙ্গত, ২০০৫ সালে রাজ্যে প্রাকৃতিক গ্যাস জোগাতে গেইলের সঙ্গে আলোচনায় উদ্যোগী হয়েছিলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। পরে এই বিষয়ে আরও বেশি উদ্যোগী হয়েছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এরপরেই গেইল এই রাজ্যে প্রাকৃতিক গ্যাস জোগাতে নতুন প্রকল্প হাতে নেয়। জগদীশপুর থেকে এই রাজ্যে হলদিয়া হয়ে ধামড়া পর্যন্ত গ্যাস জোগাবে গেইল। ইতিমধ্যে সেই কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। সেখান থেকে এই গ্যাস যাতে রাজ্যের সর্বত্র ছড়িয়ে দেওয়া যায়, সেজন্য এবার জেলা প্রশাসনকে উদ্যোগী হতে বলল নবান্ন।
বিভিন্ন জায়গায় এই পাইপলাইন পাততে কিছু জমি দরকার। শহর ও গ্রামীণ এলাকায় কিছু জমি দরকার। জমি অধিগ্রহণের আগে জমির মালিকদের সঙ্গে কথা বলবে জেলা প্রশাসন। সেক্ষেত্রে যাতে স্বচ্ছতা বজায় থাকে, সেই বিষয়টিকে নজরে রাখা হচ্ছে। এই বিষয়ে কৃষিজমি নেওয়া হলে জমি-দাতাদের এক বছরের ফসলের দাম ও জমির বর্তমান বাজার দরের ১০ শতাংশ দিয়ে দেওয়া হবে। যেহেতু পাইপলাইনটি জমির ৪ থেকে ৫ মিটার নীচ দিয়ে যাবে, ফলে জমির কোনও ক্ষতি হবে না। শহর ও গ্রামীণ এলাকায় জমি-দাতাদের সঙ্গে কথা বলে দ্রুত এই কাজ শেষ করার পরিকল্পনা করছে রাজ্য সরকার।
ভিন রাজ্যে বিজেপির ‘প্রাক্তনী’দের নিয়ে প্রভাব বিস্তার করতে চাইছে তৃনমূল
দিল্লি-মুম্বাইয়ের মতো এই শহরেও শীঘ্র CNG-চালিত গাড়ি যাতে নির্ঝঞ্ঝাটে চলতে পারে, তা নিশ্চিত করতে কলকাতায় চালু হতে চলেছে CNG স্টেশন। গড়িয়া ও নিউ টাউনে দু’টি CNG স্টেশন নির্মাণের কাজ ইতিমধ্যেই শেষ হয়েছে। গেইল ও রাজ্য সরকারের গ্রেটার ক্যালকাটা গ্যাস সাপ্লাই কর্পোরেশনের যৌথ সংস্থা বেঙ্গল গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড (বিজিসিএল) এই CNG স্টেশন দু’টির নির্মাণকাজ শেষ করেছে। এর ফলে রাজ্যে ২০২৪ সালের মধ্যে বিজিসিএলের হাত ধরে ৫১০০ কোটি টাকার বিনিয়োগের সুযোগ তৈরি হয়েছে।
এই কাজ শেষ হয়ে গেলে রাজ্যবাসীর কাছে অনেক সস্তায় রান্নার গ্যাস পৌঁছে যাবে। ধামড়ায় গেইলের মূল পাইপলাইন পাতার কাজ শেষ হয়ে গেলে বেঙ্গল গ্যাস, হিন্দুস্তান পেট্রোলিয়াম ও ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশন–আদানি গোষ্ঠীর মাধ্যমে এই গ্যাস রাজ্যের নানা এলাকায় বণ্টনের কাজ শুরু হয়ে যাবে। ওয়াকিবহাল মহলের মতে, লোকসভা ভোটের আগে এই প্রাকৃতিক গ্যাস মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে পারলে তা আগামিদিনে তৃণমূলকে ভালো ডিভিডেন্ট দেবে বলেই মনে করা হচ্ছে। পেট্রোপণ্য ও রান্নার গ্যাসের দাম যখন ক্রমশ বাড়ছে, তখন এই গ্যাস মানুষের কাছে অনেক সস্তায় পৌঁছোবে বলেই মনে করা হচ্ছে।