বিরোধীদের পূর্ণ সমর্থনে মঙ্গলবার রাজ্য বিধানসভা সর্বসম্মতিক্রমে ধর্ষণ বিরোধী বিল পাস করেছে। কিন্তু বিলে বিরোধী নেতা শুভেন্দু অধিকারীর প্রস্তাবিত সংশোধনী গৃহীত হয়নি। রাজ্যের আইনমন্ত্রী মলয় ঘটক এই বিল পেশ করেন। বিলের খসড়ায় ধর্ষণের শিকার ব্যক্তি মারা গেলে বা স্থায়ীভাবে অজ্ঞান হয়ে গেলে এ ধরনের অপরাধীদের জন্য মৃত্যুদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। এ ছাড়া খসড়ায় ধর্ষণ ও গণ-ধর্ষণে দোষী সাব্যস্ত ব্যক্তিদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং প্যারোলের সুবিধা না দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। ‘অপরাজিতা নারী ও শিশু বিল (ওয়েস্ট বেঙ্গল ক্রিমিনাল ল অ্যান্ড অ্যামেন্ডমেন্ট) বিল ২০২৪’ শিরোনামের প্রস্তাবিত আইনটির লক্ষ্য ধর্ষণ ও যৌন অপরাধ সম্পর্কিত নতুন বিধানের মাধ্যমে নারী ও শিশুদের নিরাপত্তা জোরদার করা। উল্লেখ্য, গত মাসে কলকাতার আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে এক শিক্ষানবিশ চিকিৎসককে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনার পর সোমবার বিধানসভার দুদিনের বিশেষ অধিবেশন ডাকা হয়েছিল। এই অধিবেশনে শাসক দল ও বিরোধী দলের প্রায় সব বিধায়ক অংশ নেন। সংসদে প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে এই বিল নিয়ে আলোচনা হয়। বিজেপি বিধায়ক শিখা চ্যাটার্জি এবং অগ্নিমিত্র পাল ছাড়াও বিরোধী নেতা শুভেন্দু অধিকারীও আলোচনায় অংশ নিয়েছিলেন। শাসক দলের পক্ষে আলোচনায় অংশ নেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী শোভন দেব চট্টোপাধ্যায়। এখন বিধানসভায় পাস হওয়া এই বিলটি রাজ্যপাল ডঃ সিভি আনন্দ বোসের কাছে পাঠানো হবে। রাজ্যপাল এই বিলে স্বাক্ষর করে রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠাবেন। রাষ্ট্রপতির সম্মতিতেই এই বিল আইনে রূপ নেবেন।
কেন্দ্রীয় আইনে সংশোধনী আনতে পারে রাজ্য সরকার: মমতা
আরজি কর ঘটনার পর অপরাধীদের কঠোর শাস্তি দিতে নতুন বিল আনা হয়েছে। রাজ্য সরকার ভারতীয় ন্যায় সংহিতা থেকে আলাদা আরও কঠোর আইন প্রয়োগ করতে বিধানসভায় উল্লিখিত বিলটি পাস করেছে। এমন পরিস্থিতিতে বিরোধীদের অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, কেন্দ্রীয় আইন থাকা সত্ত্বেও রাজ্যগুলি কেন বিভিন্ন বিল আনছে? মঙ্গলবার বিধানসভা বিল পেশ হওয়ার পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান নতুন বিলে কি কি পরিবর্তন আনা হয়েছে। এ দিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, নতুন বিলের জোর দেওয়া হয়েছে শাস্তি বৃদ্ধি, দ্রুত তদন্ত এবং দ্রুত বিচারের ওপর। তিনি বলেন, নতুন আইন নিশ্চিত করবে যে যৌন হয়রানির জন্য কঠোরতম শাস্তি। বিচার বিধিতে শাস্তির কথা বলা আছে। কিন্তু আমাদের আইনে তা বাড়ানো হয়েছে।
আরও পড়ুন : আরজি কর কাণ্ডে পথে বামফ্রন্ট, মিছিলে পা মেলালেন সাধারণ জনতা
মমতা একে একে পরিবর্তনগুলি উল্লেখ করেছেন:
- ধর্ষণ এবং গণ-ধর্ষণের ক্ষেত্রে, ভারতীয় দণ্ডবিধিতে ১০ থেকে ২০ বছরের জন্য সশ্রম কারাদণ্ড, বিশেষ ক্ষেত্রে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। অপরাজিতা বিলে বলা হয়েছে, এই অন্যায়ের শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, অপরাধ গুরুতর হলে মৃত্যুদণ্ডেরও বিধান রয়েছে।
- ধর্ষিতার মৃত্যুর ক্ষেত্রে, ভারতীয় দণ্ডবিধিতে ২০ বছরের জন্য সশ্রম কারাদণ্ড, বিশেষ ক্ষেত্রে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। বাংলার নতুন অপরাজিতা বিলে সেই শাস্তি মৃত্যুদণ্ড ও জরিমানা করা হয়েছে।
- অ্যাসিড আক্রমণের ক্ষেত্রে, ভারতীয় দণ্ডবিধিতে ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড, বিশেষ ক্ষেত্রে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং জরিমানা করার বিধান রয়েছে। একইসঙ্গে বিধানসভায় পাস হওয়া বিলে অ্যাসিড হামলার অভিযুক্তদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং বিশেষ ক্ষেত্রে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রয়েছে। এ ছাড়া বিলে দ্রুত তদন্তের জন্য অপরাজিতা টাস্কফোর্স গঠনের কথা বলা হয়েছে। প্রাথমিক রিপোর্টের ২১ দিনের মধ্যে তদন্ত শেষ করতে হবে। একই সঙ্গে প্রয়োজনের ভিত্তিতে তদন্তের জন্য আরও ১৫ দিন সময় দেওয়া যেতে পারে। ভিক-টিম শিশু হলে ৭ দিনের মধ্যে প্রমাণ সংগ্রহ করতে হবে। এ ছাড়া চার্জশিট শেষ হওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে শুনানি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার বিধান রয়েছে।