ওয়েব ডেস্ক: পিএম কেয়ার্স ফান্ড, গত বছর ২৭ মার্চ তৈরি হওয়া এই ফান্ডের চেয়ারম্যান প্রধানমন্ত্রী। দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রতিরক্ষামন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী তহবিলের অছি পরিষদের সদস্য। তার ওয়েবসাইটে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ছবি রয়েছে। নামের সঙ্গে জাতীয় প্রতীক অশোক স্তম্ভও রয়েছে। তাতে চাঁদা চেয়ে সরকারি খরচে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মচারী, রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা, ব্যাঙ্কের কর্মীদের বেতন কেটে তহবিলে টাকা জমা করা হয়েছে। রেল থেকে বিদেশ মন্ত্রক, শিক্ষা থেকে স্বাস্থ্য মন্ত্রক— সরকারের প্রতিটি মন্ত্রকই কোটি কোটি টাকা এই তহবিলে অনুদান হিসেবে জমা করেছে।
কিন্তু বাস্তবে জানাগেল প্রধানমন্ত্রীর নামে তহবিল ও তিনিই চেয়ারম্যান হলেও এর সাথে সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারের কোনও সম্পর্ক নেই! এই তহবিল কেন্দ্রীয় সরকারের অধীন নয়। এর কাজকর্মেও সরকারের কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই।
এই নিয়ে এতো দিন বিরোধীরা বার বার দাবি করে এলেও সরকারের পক্ষ থেকে কোনও উত্তর মেলেনি। শেষ অবধি মামলায় আজ প্রধানমন্ত্রীর দফতরের আন্ডার সেক্রেটারি প্রদীপ কুমার শ্রীবাস্তব দিল্লি হাই কোর্টে হলফনামা দিয়ে দাবি করেছেন, এই তহবিলে বাজেট থেকে কোনও অর্থ বরাদ্দ করা হয় না। শুধু মাত্র স্বেচ্ছায় অনুদানই জমা পড়ে। সংবিধান বা সংসদের তৈরি কোনও আইনের মাধ্যমে এই তহবিল তৈরি করা হয়নি। এর পরেই কংগ্রেস-সহ বিরোধী শিবিরের প্রশ্ন, পিএম-কেয়ার্সের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর কোনও সম্পর্ক না থাকলে তিনি কেন একটা বেসরকারি তহবিলে চাঁদা জোগাড়ের জন্য নিজের পদের অপব্যবহার করেছেন?
প্রধানমন্ত্রী জাতীয় ত্রাণ তহবিল থাকতে কেন আলাদা করে তহবিল তৈরির প্রয়োজন পড়ল, তা নিয়েও বিরোধী নেতানেত্রীরা প্রশ্ন তুলেছেন। তথ্যের অধিকার আইনে এই তহবিলের জমা-খরচ নিয়ে কোনও তথ্য দিতে চায়নি প্রধানমন্ত্রীর দফতর। পিএম-কেয়ার্সে কত টাকা জমা পড়ছে আর সেই টাকা কোথায় খরচ হচ্ছে। সরকারি হিসেব পরীক্ষক সংস্থা সিএজি-কেও এর হিসেবনিকেশ পরীক্ষা করতে দেওয়া হয়নি। বিরোধীরা এ নিয়ে সংসদেও প্রশ্ন তুলেছেন।
ত্রিপুরা হাইকোর্টে জোর ধাক্কা খেল বিপ্লব দেবের প্রশাসন, স্বস্তিতে তৃণমূল
মোদী সরকার বরাবরই যুক্তি দিয়েছে, পিএম- কেয়ার্স পাবলিক চ্যারিটেবল ট্রাস্ট। এ’টি কোনও সরকারি সংস্থা নয়। অথচ পিএম- কেয়ার্স তহবিল থেকে কোভিডের টিকা, চিকিৎসার ভেন্টিলেটর কেনা হচ্ছে বলে বিভিন্ন সময়ে প্রধানমন্ত্রীর দফতরই বিবৃতি দিয়েছে। পিএম-কেয়ার্সের ওয়েবসাইটে যোগাযোগের জন্য প্রধানমন্ত্রীর দফতরের আন্ডার সেক্রেটারির নামই রয়েছে। ঠিকানার জাইগাই রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর দফতরের ঠিকানা। কিন্তু আজ প্রধানমন্ত্রীর দফতরই হাই কোর্টে জানিয়েছে, সরকারি অফিসার নিজের সরকারি কাজের পরে যদি কোনও সংস্থার কাজকর্মে সাহায্য করে থাকেন, তার জন্য সেই সংস্থাকে সরকারি সংস্থা বলা চলে না।
পেগাসাস-তদন্তে বিশেষজ্ঞ কমিটি গড়বে সুপ্রিম কোর্ট, জানাল সুপ্রিম কোর্ট
এই ফান্ড নিয়ে আবারও একটি জনস্বার্থ মামলা হয় দিল্লী হাই কোর্টে, মামলা করেন আইনজীবী সম্যক গাঙ্গোয়াল। তিনি আদালতের কাছে আর্জি জানান, আদালতও যদি মেনে নেয় যে পিএম-কেয়ার্স তহবিল কোনও সরকারি সংস্থা নয়, তা হলে সেখানে প্রধানমন্ত্রীর ছবি, জাতীয় প্রতীকের ব্যবহার বন্ধ করা হোক। আজ প্রধানমন্ত্রীর দফতর পিএম- কেয়ার্স তহবিলের সঙ্গে সরকারের সম্পর্ক নেই বলে জানিয়ে দেওয়ার পরে বিরোধীরা প্রশ্ন তুলেছে, যদি এটা সরকারি তহবিল না হয়, তা হলে সেখানে প্রধানমন্ত্রীর নাম কেন? কেন সরকারি কর্মচারী, রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার কর্মীদের বাধ্য করা হয়েছিল এতে টাকা জমা করতে? খোদ অর্থ মন্ত্রকের রাজস্ব দফতর গত বছরের এপ্রিলে সার্কুলার জারি করে জানিয়েছিল, কারও আপত্তি না থাকলে এক বছর পর্যন্ত ইচ্ছুক কর্মীদের প্রতি মাসে একদিনের বেতন কেটে পিএম-কেয়ার্সে জমা করা হবে। এই নিয়ে কংগ্রেসের দাবি, এই ভাবে জোর করে টাকা তুলে পিএম-কেয়ার্সে প্রায় ৪০ থেকে ৫০ হাজার কোটি টাকা জমা পড়েছে। সেই টাকা কোথায় গেল? দিল্লি হাই কোর্টে প্রধান বিচারপতি ডি এন পটেলের বেঞ্চে এই মামলার পরবর্তী শুনানি ২৭ সেপ্টেম্বর।