ওয়েব ডেস্ক: লখিমপুর কাণ্ডে উত্তর প্রদেশ সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলল সুপ্রিম কোর্ট। লখিমপুর কাণ্ডে তদন্তকারী অফিসারদের সরিয়ে নতুন অফিসারদের দায়িত্ব দেওয়ার নির্দেশও দিয়েছে শীর্ষ আদালত। শুক্রবার এভাবেই উত্তর প্রদেশ পুলিশের উপর চাপ বাড়াল শীর্ষ আদালত। এই ঘটনায় স্বতঃপ্রণোদিত মামলা গ্রহণ করেছে সুপ্রিম কোর্ট। সেই মামলার শুনানিতে এদিন উত্তর প্রদেশ সরকারের পক্ষে সওয়াল করেন আইনজীবী হরিশ সালভে।
আদালত শুক্রবারের শুনানিতে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেয়, ‘লখিমপুর কাণ্ডে আটজনের মৃত্যুর পরও যোগী সরকার যে পদক্ষেপ নিয়েছে তা মোটেও পর্যাপ্ত নয়। এই ভূমিকায় মোটেও খুশি নয় আদালত।’ মামলার পরবর্তী শুনানি ২০ অক্টোবর অর্থাৎ দশমীর পর।’
বৃহস্পতিবার থেকেই সুপ্রিম কোর্টে (Supreme Court) লখিমপুর মামলার শুনানি শুরু হয়েছে। গতকালই শীর্ষ আদালতের তরফে উত্তর প্রদেশ সরকারকে এফআইআরের যাবতীয় তথ্য, মৃত আটজন সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্যয় সহ মামলার যাবতীয় গতিপ্রকৃতি নিয়ে একটি রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছিল। এ দিকে, গতকালই পুলিশ লখিমপুরকাণ্ডে অভিযুক্ত দুই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অজয় কুমার মিশ্রের ছেলে আশীষ মিশ্রকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হাজিরা দিতে বলা হয়। যদিও আজ মন্ত্রীপুত্র সেই সমন এড়িয়ে গিয়েছেন এবং হাজিরা দেননি।
শুনানির শুরুতেই প্রধান বিচারপতি বলেন, “আমাদের কাছে শতাধিক ই-মেইল এসেছে। আমরা দুই আইনজীবী ও রাজ্যের তরফে হাজির কাউন্সিল ছাড়া কাউকে কথা বলতে দেওয়া হবে না।” গতকাল সুপ্রিম কোর্টের তরফে যে রিপোর্ট চাওয়া হয়েছিল, তা জমা দেওয়া হয়েছে বলে জানান আইনজীবী সালভে। তিনি বলেন, “প্রাথমিক রিপোর্ট জমা দেওয়া হয়েছে, তবে আগামিদিনে মামলার আরও নানা দিক সামনে আসবে। যার বিরুদ্ধে প্রধান অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে, তাঁর আজই হাজির হওয়ার কথা থাকলেও তাঁকে আগামীকাল সকাল ১১টা অবধি সময় দেওয়া হয়েছে পুলিশের সমনের জবাব দিয়ে হাজিরার জন্য।”
নিলামে Air India কিনল Tata গোষ্ঠী, ৬৮ বছর পর এয়ার ইন্ডিয়ার মালিক আবার Tata Sons
প্রধান বিচারপতি প্রশ্ন করেন, “এফআইআরে দেখা যাচ্ছে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ৩০৩ ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। তবে বাকি অপরাধীদের মতোই তাঁকেও গণ্য করা হচ্ছে কেন?” জবাবে হরিশ সালভে বলেন, “কৃষকদের ময়নাতদন্তের রিপোর্টে বুলেটের আঘাতের কোনও প্রমাণ মেলেনি। যেভাবে গাড়িটি চালানো হয়েছিল, তা দেখে মনে করা হচ্ছে ৩০২ ধারায় মামলা দায়ের করা উচিত। তবে আমি বলতে চাই যে, এই অভিযোগগুলি হয়তো সত্যিই। যতদিন বিচার প্রক্রিয়া চলছে, ততদিন হয়তো শব্দটি ব্যবহার করলেও যদি প্রমাণগুলি সত্য বলে প্রমাণিত হয়, তবে এটিকে ৩০২ ধারার (খুনের) মামলা হিসাবেই গণ্য করা উচিত।”
জবাবে প্রধান বিচারপতি তাঁকে পাল্টা প্রশ্ন করেন, ‘কেন খুনের মামলায় অভিযুক্তদের সঙ্গে ভিন্ন ব্যবহার করছে উত্তরপ্রদেশ পুলিশ? আমরা দায়িত্ববান পুলিশ ও দায়িত্ববান প্রশাসন দেখতে চাই। খুনের মামলায় ৩০২ ধারায় মামলা রুজু হলে অভিযুক্তের সঙ্গে পুলিশ কি ধরনের ব্যবহার করে? আর এক্ষেত্রে কি ব্যবহার করা হয়েছে?’ প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, ‘অভিযুক্ত যদি কোনও সাধারণ মানুষ হতেন তাহলেও কি পুলিশের একই অবস্থান হত? বেঞ্চ মনে করছে সেক্ষেত্রে ময়নাতদন্তের রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করতে হত না।’
‘কতজনকে গ্রেফতার করেছেন?’ যোগী সরকারের কাছে রিপোর্ট তলব সুপ্রিম কোর্টের
শীর্ষ আদালত জানিয়েছে, আগামী ২০ অক্টোবর মামলার পরবর্তী শুনানি হবে। ততদিন পর্যন্ত সমস্ত তথ্যপ্রমাণ সংরক্ষণ করার জন্য উত্তর প্রদেশ পুলিশের ডিজি-কে নির্দেশ দিয়েছে শীর্ষ আদালত৷ পাশাপাশি, এখন যারা তদন্ত করছেন সেই অফিসারদেরও সরিয়ে নতুন অফিসারদের দায়িত্ব দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, লখিমপুর খেরির ঘটনায় তদন্তের জন্য হাইকোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি প্রদীপ কুমার শ্রীবাস্তবের নেতৃত্বে একটি কমিশন গঠন করেছে উত্তরপ্রদেশ প্রশাসন। আগামী দুই মাসের মধ্যে এই কমিশনকে রিপোর্ট জমা দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে।