ওয়েব ডেস্ক: ৬৮ বছর পর ফের টাটা গোষ্ঠীর হাতে এয়ার ইন্ডিয়া। ১৮ হাজার কোটি টাকা দাম দিয়ে এয়ার ইন্ডিয়ার মালিকানা পেল টাটা সন্স (Tata Sons)। এয়ার ইন্ডিয়ার (Air India) ও স্বল্প ভাড়ার এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের (Air India Express) ১০০ শতাংশ অংশীদারিত্বের পাশাপাশি এয়ার ইন্ডিয়া স্যাটস এয়ারপোর্ট সার্ভিসেস প্রাইভেট লিমিটেডের (AISATS) ৫০ শতাংশ শেয়ারের মালিকানা পেল টাটা (TATA Sons)।
গত বেশ কয়েক বছর ধরে দেনার ভারে জর্জরিত এয়ার ইন্ডিয়া। উপায় হিসাবে তাই বিলগ্নিকরণেই আস্থা ছিল কেন্দ্রের। কেন্দ্রীয় সরকার গত সপ্তাহের শুরুতে এয়ার ইন্ডিয়ার দরপত্র মূল্যায়ন শুরু করে। সূত্রের খবর, নিলামে দ্বিতীয় স্থানে ছিলেন স্পাইসজেটের প্রধান অজয়সিং। তাঁদের দরপত্র ছিল প্রায় ১৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা।
এই বছরের মার্চে অসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রী হরদীপ সিং পুরি বলেছিলেন, “আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে এয়ার ইন্ডিয়ার শতভাগ বিকেন্দ্রীকরণ করা হবে। এই এয়ারলাইন সরকারের সম্পদ। কিন্তু ৬০ হাজার কোটি টাকা ঋণের বোঝার কারণে একে ঝেড়ে ফেলার প্রয়োজন আছে।” ২০০০ সালে প্রথমবার এয়ার ইন্ডিয়া বিক্রির বিষয়ে কথা ওঠে। তার পর থেকে গত কয়েক বছরে গঙ্গা দিয়ে প্রচুর জল বয়ে গিয়েছে। এয়ার ইন্ডিয়া চালিয়ে সরকারের প্রতিদিন ২০ কোটি টাকা লোকসান হচ্ছিল বলে জানিয়েছিলেন হরদীপ সিং পুরী। ২০১৭ সালে নরেন্দ্র মোদী সরকার এয়ার ইন্ডিয়া বিক্রির জন্য তৎপর হয়েছিল। যদিও ২৪ শতাংশ শেয়ার ধরে রাখার সিদ্ধান্তের ফলে কোন ক্রেতা এগিয়ে আসেনি। এর আগে, অটল বিহারী বাজপেয়ীর নেতৃত্বাধীন এনডিএ সরকারও ২০০১ সালে এয়ার ইন্ডিয়ার ৪০ শতাংশ শেয়ার বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। সেই সময় আবার কয়েকজন ক্রেতা আগ্রহ দেখিয়েছিল, তবে শেয়ার বিক্রি শেষ পর্যন্ত করা হয়নি।
প্যান্ডোরার ঝাঁপি খুলতেই ফাঁস ভারতীয় প্রভাবশালীদের নাম
এয়ার ইন্ডিয়ার ইতিহাস স্বাধীন ভারতের চেয়েও পুরনো। জেআরডি টাটা (JRD Tata) পাইলটের লাইসেন্স পাওয়া প্রথম ভারতীয়। তিনি ১৯৩২ সালে করাচী এবং বোম্বাইয়ের (বর্তমান মুম্বাই) মধ্যে এয়ারমেইল পরিষেবা (Airmail Service) চালু করার সিদ্ধান্ত নেন। ১৯৪০ সালে টাটা সন্সের বিমান সংস্থাটি এয়ার ইন্ডিয়া হিসেবে নথিভুক্ত হয়। তিনি শীঘ্রই পরিষেবার ব্যাপ্তি ঘটান ও ১৯৪৬ সালে নাম বদলে হয় এয়ার ইন্ডিয়া। ১৯৪৬ সাল থেকে বাণিজ্যিক পরিবহণ শুরু করে সংস্থা। ১৯৪৮ সালে ইউরোপে বিমান চালানো শুরু করেন টাটার।
আর ভ্যাঁ-ভোঁ-প্যাঁ-পোঁ নয়, গাড়ির হর্নে এবার বাজবে সেতার, তবলা : নীতিন গডকড়ি
১৯৫৩ সালে টাটার হাত থেকে এই উড়ানকে অধিগ্রহণ করে কেন্দ্র। যদিও ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত সংস্থার চেয়ারম্যান হিসাবে কাজ চালিয়ে যান জেআরডি টাটা। ৭৮ সালে মোরারজি দেশাইয়ের (Morarji Desai) নেতৃত্বাধীন জনতা পার্টি সরকারের সঙ্গে মতবিরোধের কারণে সরে দাঁড়ান টাটা। যদিও ইন্দিরা গান্ধীর (Indira Gandhi) সরকার পরে তাঁকে আবারও ফিরিয়ে এনে এয়ার ইন্ডিয়ার বোর্ডে বসান।
সরকার এয়ার ইন্ডিয়ায় তার সম্পূর্ণ অংশীদারিত্ব বিক্রি করছে। অসামরিক বিমান পরিষেবা ক্ষেত্রে টাটা গ্রুপ নতুন নয়। এয়ারএশিয়া ইন্ডিয়াতে প্রায় ৮৪% এবং ভিস্তারায় ৫১% শেয়ার আছে টাটা গ্রুপের। ফলে এয়ার ইন্ডিয়া যে বেশ অভিজ্ঞ হাতেই যাচ্ছে, তা বলা যায়।