দীর্ঘদিন ধরে আমরা বিশ্বাস করতাম যে হাঁটুর সমস্যা বার্ধক্যের লক্ষণ। কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণা এই ধারণা বদলে দিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে আধুনিক জীবনধারা, অতিরিক্ত ওজন এবং শারীরিক অস্বাভাবিকতার কারণে, এখন তরুণ প্রজন্মের মধ্যেও হাঁটুর অবক্ষয় দেখা যাচ্ছে।
হাঁটুর ক্ষয় কোনও লক্ষণ ছাড়াই অল্প বয়সে শুরু হচ্ছে। ফলস্বরূপ, আপনি যদি আগে থেকে সতর্ক না হন, তাহলে ভবিষ্যতে অস্টিওআর্থারাইটিস (এক ধরণের আর্থ্রাইটিস) এর মতো জটিল রোগ আপনার জন্য অপেক্ষা করছে।
ফিনল্যান্ডের ওলু বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে যে ত্রিশ বছর বয়সের আগেই হাঁটুর কাঠামোগত অবক্ষয়ের লক্ষণ দেখা দিতে শুরু করে। ত্রিশের কোঠার অনেক মানুষের ক্ষেত্রেই হালকা তরুণাস্থির ক্ষতি এবং ছোট হাড়ের ছিদ্র দেখা যায়। তবে, এই সময়ে বেশিরভাগ মানুষই হাঁটুতে ব্যথা বা অন্যান্য উপসর্গ অনুভব করেন না।
গবেষকরা বলছেন যে অতিরিক্ত ওজন বা বডি মাস ইনডেক্স (BMI) বেশি থাকা হাঁটুর উপর চাপ বাড়ায়, যার ফলে দ্রুত ক্ষয়ক্ষতি হয়। অতএব, হাঁটুর স্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য ওজন নিয়ন্ত্রণ এবং সক্রিয় জীবনযাত্রা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।
গবেষণায় ২৯৭ জন অংশগ্রহণকারীকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল, যাদের গড় বয়স ৩৩.৭ বছর। দেখা গেছে যে তাদের অর্ধেকেরও বেশি হাঁটুর ক্ষয়ের প্রাথমিক লক্ষণ দেখিয়েছেন, যদিও কেউ কেউ কোনও ব্যথা বা অস্বস্তি অনুভব করেননি। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই লক্ষণগুলিকে উপেক্ষা করলে ভবিষ্যতে অস্টিওআর্থ্রাইটিস (OA) এর মতো গুরুতর সমস্যা দেখা দিতে পারে। অন্য কথায়, হাঁটুর ক্ষয় কেবল বার্ধক্যের সমস্যা নয়, বরং ত্রিশ এবং চল্লিশের কোঠার মানুষের মধ্যেও ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই, এখন থেকে সতর্ক থাকা গুরুত্বপূর্ণ।
আরও পড়ুন : আপনি কি জানেন আপনার জিহ্বা আপনার হৃদরোগের স্বাস্থ্য সম্পর্কে কি কি বলে
এই সমস্যা কীভাবে প্রতিরোধ করবেন?
হাঁটুকে সুস্থ রাখতে এবং ব্যথা এড়াতে, আপনাকে প্রথমে আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। অতিরিক্ত ওজন হাঁটুর উপর চাপ বাড়ায়, যার ফলে তাদের অবস্থা আরও খারাপ হয়। অস্টিও আর্থ্রাইটিস প্রিভেনশন স্টাডি (TOPS) দেখিয়েছে যে খাদ্যতালিকাগত নিয়ন্ত্রণ এবং নিয়মিত ব্যায়ামের সংমিশ্রণ হাঁটুর অবস্থা উল্লেখযোগ্য ভাবে কমাতে পারে, বিশেষ করে যাদের ঝুঁকি বেশি তাদের ক্ষেত্রে।
নিয়মিত ব্যায়াম খুবই কার্যকর। শক্তি প্রশিক্ষণ, অ্যারোবিক ব্যায়াম, বা নমনীয়তা ব্যায়াম হাঁটুর চারপাশের পেশীগুলিকে শক্তিশালী করে, জয়েন্টের স্থিতিশীলতা বৃদ্ধি করে। গবেষণায় দেখা গেছে যে এই ধরনের ব্যায়াম হাঁটুর ব্যথা কমায় এবং হাঁটার ক্ষমতা উন্নত করে। বিশেষ করে কোয়াড্রিসেপস, হ্যামস্ট্রিং এবং কাফ পেশীগুলিকে শক্তিশালী করা হাঁটুকে আরও বেশি সমর্থন প্রদান করে।
ব্যায়ামের আগে সঠিকভাবে উষ্ণ হওয়ার এবং পরে ঠান্ডা হওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলাও গুরুত্বপূর্ণ। এটি পেশী এবং জয়েন্টের আঘাত প্রতিরোধে সহায়তা করে। সঠিকভাবে সহায়ক জুতা পরা হাঁটুর উপর চাপ কমায়। সঠিক পায়ের সারিবদ্ধতা হাঁটুর দুর্বল অবস্থানের কারণে ব্যথার ঝুঁকিও কমায়।
আরও পড়ুন : আঙুল ফাটানর সময় যে ‘পপ’ শব্দ আসে তার কি আর্থ্রাইটিসের সাথে কোন সম্পর্ক আছে, জানুন
দীর্ঘ সময় ধরে বসে থাকা এড়িয়ে চলা গুরুত্বপূর্ণ। দীর্ঘ সময় ধরে বসে থাকা হাঁটুর চারপাশের পেশীগুলিকে শক্ত এবং দুর্বল করে তুলতে পারে। অতএব, মাঝে মাঝে উঠে হাঁটা বা আপনার শরীরকে নাড়াচাড়া করলে হাঁটুর উপর চাপ কমাতে পারে। একইভাবে, শারীরিক কার্যকলাপের সময় সঠিক ভঙ্গি এবং কৌশল বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ। উদাহরণস্বরূপ, ভারী জিনিস তোলার সময়, হাঁটুতে অতিরিক্ত চাপ এড়াতে পিঠের চেয়ে পায়ের শক্তি ব্যবহার করা উচিত।
প্রচুর পরিমাণে জল পান করা এবং ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া হাঁটুর জন্যও উপকারী। পর্যাপ্ত জল শরীরের সাইনোভিয়াল তরল বজায় রাখে, যা জয়েন্টগুলিকে লুব্রিকেট করে। হাড়ের শক্তি বজায় রাখার জন্য ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন ডি অপরিহার্য। এর ঘাটতি অস্টিওপেনিয়া বা অস্টিওপোরোসিসের ঝুঁকি বাড়ায়, যা সরাসরি হাঁটুর স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলে।
যদি আপনি নিয়মিত হাঁটুতে অস্বস্তি বা ব্যথা অনুভব করেন, তাহলে আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা উচিত। প্রাথমিক চিকিৎসা গুরুতর জটিলতা প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে।