ওয়েব ডেস্ক: গ্রীষ্মের প্রখর উত্তাপ থেকে রেহাই দিতে আসে বর্ষাকাল। তবে বর্ষাকাল হল রোগের আঁতুড়ঘর। এই সময় সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি থাকে। উচ্চ আর্দ্রতা এবং স্যাঁতস্যাঁতে ভাব, ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাক সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে। ফ্লু, সর্দি-কাশি, হাঁপানি, ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু, ডায়রিয়া এবং নানান ধরনের চর্মরোগ, বর্ষাকালে বেশি দেখা যায়। বিশেষ করে বর্ষাকালে বিভিন্ন ধরনের অ্যালার্জি হয়, যা প্রবল অস্বস্তির সৃষ্টি করে।
তবে আগে থেকে সতর্ক থাকলে, অ্যালার্জির সমস্যা থেকে কিছুটা রেহাই পাওয়া সম্ভব। তাহলে জেনে নিন, বর্ষার মরসুমে কত ধরনের অ্যালার্জি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে এবং কীভাবে তা প্রতিরোধ করা যেতে পারে।
বর্ষায় হওয়া বিভিন্ন ধরনের অ্যালার্জি
১) স্কিন অ্যালার্জি
বর্ষায় স্কিন অ্যালার্জির সমস্যা বেশি লক্ষ্য করা যায়। বিশেষত যেখানে দূষণের মাত্রা খুব বেশি সেখানে বেশি স্কিনের সমস্যা লক্ষ্য করা যায়। স্যাঁতস্যাঁতে জামা-কাপড়, ভেজা জুতো, রেইন কোট, জ্যাকেট, গ্লাভস, ত্বকের সংস্পর্শে আসার ফলে ছত্রাকের সংক্রমণ বাড়িয়ে তোলে। বিশেষত শরীরের বিভিন্ন ভাঁজ যেমন হাঁটুর পেছন দিকে, কনুই-এর ভেতরের দিকে, অ্যালার্জি হতে পারে।
২) হাইপারপিগমেন্টেশন
বর্ষাকালে হওয়া অন্যতম সাধারণ অ্যালার্জি হল হাইপারপিগমেন্টেশন। এটি মূলত মুখের ত্বকে বেশি দেখা যায়। এর ফলে মুখের ত্বকে কালো ছোপ পড়ে যায়। ত্বকে হাইপারপিগমেন্টেশন হওয়ার মূল কারণ হল অতিরিক্ত মেলানিন উৎপাদন। অতিরিক্ত পরিমাণে ইউভি-এ ও ইউভি-বি রশ্মিতে প্রকাশের কারণে মেলানিন উৎপাদন বাড়তে পারে। বর্ষার সময় সূর্যের আলোয় সংস্পর্শের অভাবের কারণে এই ঘটনা ঘটে।
আপনার কি চুল ঝরে মাথায় টাক পড়ে যাচ্ছে! যেনে নিন কিছু ঘরোয়া টোটকা
৩) ব্রণ এবং একজিমা
বর্ষার অন্যতম অ্যালার্জি হল ব্রণ এবং একজিমা। উচ্চ আর্দ্রতা এবং পরিবর্তিত আবহাওয়ার কারণে, ত্বকে জ্বালাভাব কিংবা লালচে ভাব দেখা দিতে পারে। যার ফলে ব্রণ এবং একজিমার বিকাশ ঘটে।
৪) ফেসিয়াল ফলিকিউলাইটিস
বর্ষাকালে এই সমস্যা খুবই সাধারণ। ত্বকের হেয়ার ফলিকলস-এ জ্বালা, চুলকানি লক্ষ্য করা যায়। ফলিকিউলাইটিস বাহু, উরু এবং কপালে দেখা দিতে পারে। মূলত উচ্চ আর্দ্রতা, ডিহাইড্রেশন, ঘাম এবং ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাকের সংক্রমণে, এই সমস্যা হয়ে থাকে।
৫) মোল্ড অ্যালার্জি
মোল্ড মূলত ছত্রাক জনিত কারণে সৃষ্টি হয়। জল ও খাবার, ভেজা দেওয়াল, সংকীর্ণ কোনও স্থান মোল্ডের মূল উৎস। বর্ষাকালে মোল্ড অনেকটাই বৃদ্ধি পায়। ফলে ত্বকে বিভিন্ন ধরনের অ্যালার্জি হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায় এবং হাঁপানির মতো সমস্যাও দেখা দিতে পারে।
অতিরিক্ত প্রোটিন খাওয়া শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর, জেনেনিন প্রোটিনের সঠিক মাত্রা
৬) ছত্রাক সংক্রমণ
দাদ, হাজার মতো বিভিন্ন ছত্রাক সংক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনা বর্ষাকালে বেড়ে যায়। আঙুলের মাঝে এবং পায়ের আঙুলে এই সমস্যা বেশি দেখা যায়। তবে শরীরের অন্যান্য অংশেও ছত্রাক সংক্রমণ হতে পারে। বর্ষায় উচ্চ আর্দ্রতার কারণে, ঠিকভাবে ঘাম শুকায় না, ঘামে থাকা লবণ শরীরে জ্বালা ভাব সৃষ্টি করে এবং ছত্রাক সংক্রমণের ঝুঁকি অনেকাংশে বাড়িয়ে দেয়। ফলস্বরূপ চুলকানি এবং লালচে ভাব দেখা দিতে পারে।
বর্ষায় হওয়া বিভিন্ন অ্যালার্জি কীভাবে প্রতিরোধ করবেন?
১) কার্পেট, পর্দা, গায়ে দেওয়ার চাদর-কাঁথা, সর্বদা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন এবং ধুলো-বালি মুক্ত রাখার চেষ্টা করুন। বেড কভার, কার্পেট, পর্দা গরম জল দিয়ে ধোবেন এবং যতটা সম্ভব রোদে দিন।
২) রোদের সময় দরজা-জানলা খুলে রাখুন এবং ঘরে বিশুদ্ধ বাতাস চলাফেরার সুযোগ করে দিন। ফলে ঘরে দূষণের পরিমাণ কম হবে।
৩) দেওয়াল এবং মেঝে যতটা সম্ভব শুকনো রাখার চেষ্টা করুন।
৪) এয়ার পিউরিফায়ার এবং এয়ার কন্ডিশনারের ফিল্টার, নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখুন, যাতে ধুলোবালি এবং ময়লা না জমে থাকে।
খুশকি ও চুল পড়ার সমস্যা? জানে নিন নিরাময়ের কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি
৫) পোষ্যদের নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখুন। যাদের শ্বাসকষ্টের সমস্যা আছে, তারা পোষ্যদের শোওয়ার ঘর থেকে দূরেও রাখতে পারেন।
৬) অ্যালার্জির সম্ভাব্য লক্ষণগুলির উপর বিশেষ নজর রাখুন।
৭) বাড়ির প্রতিটি অংশ সব সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখুন। প্রয়োজনে জীবাণুনাশকও ব্যবহার করতে পারেন। পোকামাকড় ঘর থেকে তাড়ানোর ব্যবস্থা নিন।
৮) গবেষণায় দেখা গেছে যে, যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, তাদের ক্ষেত্রে অ্যালার্জি হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই বেশি। তাই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে তোলার দিকে মনোযোগ দিন।
৯) লাউ, নিম এবং বিভিন্ন ধরনের হারবাল টি শরীর থেকে টক্সিন বের করে দিতে সহায়তা করে। যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে।