এই আবহে শুক্রবার থেকে দিল্লিতে শুরু হয়েছে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক। গতবারের তুলনায় এবার লোকসভা নির্বাচনে দলের আসন সংখ্যা বেড়েছে। কিন্তু সার্বিক ফলাফল খুব একটা ভাল হয়নি। কেরালা এবং বাংলার ফলাফল বিশেষ করে দলকে হতাশ করেছে। সিপিএম কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে দলের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি নিজের হতাশা ধরে রাখতে পারেননি। দলটি তিন বছর আগে কেরালায় দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসে, কিন্তু লোকসভা নির্বাচনে মাত্র একটি আসন পায়। তার মানে ২০১৯ সালের ফলাফল ফিরে এসেছে। ইয়েচুরি বলেন, কেন রাজ্য ক্ষমতায় রয়েছে তার পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত হওয়া উচিত। অন্যদিকে, সিপিএম সূত্র আরও জানিয়েছে যে আসল কারণ হল বাংলায় নতুন মুখ নিয়ে আসা সত্ত্বেও দলটি মানুষের মন জয় করতে ব্যর্থ হয়েছে।
অন্যদিকে, কেরালায়ও এবার সিপিএমের ভোটে উল্লেখযোগ্য পতন হয়েছে। কেরালায় মাথাচাড়া দিয়েছে পদ্মা শিবির। কেরালার ঐতিহ্য যে প্রতি পাঁচ বছরে সরকার বদল হয়। কিন্তু ২০২১ সালে একটি ব্যতিক্রম ছিল। ঐতিহ্য ভেঙ্গে সিপিএম নেতৃত্বাধীন বাম গণতান্ত্রিক জোট সরকার দুবার ক্ষমতায় এসেছে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে যে ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বামদের প্রাপ্ত ভোট ২০২৪ সালের তুলনায় প্রায় ১০ শতাংশ কমেছে।
সিপিএম কেন্দ্রীয় কমিটি মনে করে যে এই তিন বছরে ভোটের ১০ শতাংশ পতন রাজনৈতিকভাবে খুবই ‘বিপজ্জনক’। শুক্রবারের বক্তৃতায় সীতারাম একই প্রসঙ্গ তোলেন। সিপিএম সূত্রে খবর, এ প্রসঙ্গে সীতারাম উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, “বিজেপি কি ভাবে কেরলে মাথা তুলছে? সিপিএমের ভোট কি তারা কেটে নিচ্ছে?” তাঁর সংযোজন, “কেরলে ভোটের ফলাফল নিয়ে নিবিড় ভাবে পর্যালোচনা করতে হবে।”
বাংলার (পশ্চিমবঙ্গ) ক্ষেত্রেও কেন জোট করেও জনগণের মন জয় করা সম্ভব হয়নি তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন কেন্দ্রীয় কমিটির অনেক সদস্য। তবে তৃণমূল ও বিজেপির মেরুকরণের রাজনীতি সত্ত্বেও চারটি আসনে জয়ের আশা ছিল। কিন্তু গতবারের তুলনায় ওইসব আসনে কিছুটা ভোট বাড়লেও তিনি জয়ের দ্বারস্থ হতে পারেননি। আলিমুদ্দিনের তরফে স্পষ্ট করেছেন যে সিপিএম কেন ব্যালট বাক্সে জনগণের সমর্থন আকর্ষণ করতে ব্যর্থ হয়েছে তা জানতে তারা সাধারণ মানুষের মধ্যে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সীতারাম ইয়েচুরি বলেন, “দলে অবশ্যই স্বাধীন মতামত উঠে আসুক। এবং সেই মতামতকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।”
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রচারের সময় তৃণমূলের বিরুদ্ধে সুর তুঙ্গে থাকলেও বিজেপির প্রতি দলের মনোভাব কিছুটা নরম ছিল। লোকেরা প্রশ্ন তুলেছে যে INDIA জোটে থেকে কেন তৃণমূলের (টিএমসি) অন্ধ বিরোধিতা করা হচ্ছে, যখন মুল লক্ষ্য কেন্দ্র থেকে বিজেপি কে হটানো। শেষ মুহূর্তে অনেক বিজেপি-বিরোধী মানুষ তাদের মত পরিবর্তন করতে পারে বলে মনেকরা হচ্ছে।