শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় দুর্নীতি মামলায় উদ্ধার একাধিক সম্পত্তির নথি ও নগদ ১৯ লক্ষ টাকা

by Chhanda Basak

ওয়েব ডেস্ক: বিষ্ণুপুর টেন্ডার দুর্নীতিতে মামলায় নয়া মোড়। শ্যামাপ্রসাদ ঘনিষ্ঠ এক ব্যক্তির বাড়ি থেকে উদ্ধার জমির দলিল ও নগদ টাকা। গ্রেফতার বিষ্ণুপুরের শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত রামশঙ্কর মহন্ত। শনিবার তাঁকে বাড়ি থেকেই গ্রেফতার করেন তদন্তকারীরা। শুক্রবার সন্ধ্যাতেই শঙ্করকে থানায় ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিলেন গোয়েন্দারা। তাঁর বয়ানে অসঙ্গতি মেলায় শনিবার শঙ্করকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় দুর্নীতি মামলায় উদ্ধার একাধিক সম্পত্তির নথি ও নগদ ১৯ লক্ষ টাকা

ফাইল চিত্র

গত ৩৪ বছর ধরে বিষ্ণুপুর পুরসভায় চেয়ারম্যান ছিলেন প্রাক্তন তৃণমূল নেতা শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় (Syama Prasad Mukherjee)। অভিযোগ, সেই সময় ৫৫টি প্রকল্পের টেন্ডার হয়েছিল। কিন্তু সেই প্রকল্পগুলিতে কোনও কাজ হয়নি। এ নিয়ে তদন্ত করে মহকুমা শাসকের কাছে রিপোর্ট দেন চিফ ভিজিল্যান্স অফিসার। তার ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করেন মহকুমা শাসক। দেখা যায়, শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের আমলে পুরসভায় প্রায় ১০ কোটি টাকা আর্থিক তছরুপ হয়েছে।

তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, বিষ্ণুপুরের ১০ কোটি টাকার টেন্ডার দুর্নীতি-কাণ্ডে শ্যামাপ্রসাদকে জেরা করে আগেই তাঁর নিজস্ব ছ’টি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের হদিশ পাওয়া গিয়েছিল। সংশ্লিষ্ট সেই ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্টগুলিতে লেনদেনের নথি খতিয়ে দেখেই রামশঙ্করের খোঁজ পাওয়া যায়।  তদন্তকারীদের দাবি, ওই নথিতেই প্রথম ধরা পড়ে, প্রাক্তন মন্ত্রীর প্রতিটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টেই বিভিন্ন সময়ে লক্ষ লক্ষ টাকা জমা করেছেন রামশঙ্কর। এরপর জেরাতেই রামশঙ্করের নাম স্বীকার করেন প্রাক্তন মন্ত্রী।

পুলিশ জানিয়েছে, ধৃত শ্যামাপ্রসাদের কাছ থেকে ‍১৯ লক্ষ টাকা-সহ জমির চারটি দলিল পাওয়া গিয়েছে। সেই চারটি দলিল শ্যামাপ্রসাদের নামেই রয়েছে।  স্থানীয় ডাকঘরে থাকা শ্যামাপ্রসাদের নামে আটটি সেভিংস অ্যাকাউন্টের পাশবইও হাতে এসেছে তদন্তকারীদের। তদন্তকারীদের অনুমান শ্যামাপ্রসাদের টাকা রামশঙ্করের মাধ্যমেই বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে টাকা জমা পড়ত। প্রাক্তন মন্ত্রীর জমি কেনাবেচা ও বিনিয়োগ সংক্রান্ত সব কিছুই দেখতেন রামশঙ্কর অনুমান গোয়েন্দাদের।

মমতার ডাকে সাড়া দিয়ে ঘর ‘ওয়াপসি’ শিখা মিত্রের

শনিবার, আচমকা অসুস্থ হয়ে পড়েন প্রাক্তন মন্ত্রী। তাঁকে বিষ্ণুপুর সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে আনা হয়। সেখানেই মেল মেডিসিন ওয়ার্ডে আপাতত চিকিৎসাধীন তিনি। হাসপাতাল সূত্রে খবর, প্রৌঢ় প্রাক্তন মন্ত্রী বুকে ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। তাঁর হার্টের অবস্থা বিশেষ ভাল নয় বলেই জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। এদিন, তাঁর জরুরি ডাক্তারি পরীক্ষা করা হয়।

শ্যামাপ্রসাদের (Shyamaprasad Mukherjee) চিকিৎসার দায়িত্বে থাকা হাসপাতাল সুপার চিকিৎসক মহেন্দ্র নাথ মাণ্ডি বলেন, “বুকে ব্যথার উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন শ্যামবাবু। পূর্বেই তিনি উচ্চ রক্তচাপ ও মুধমেহ রোগে ভুগছিলেন। মাত্রাতিরিক্ত মানসিক চাপের জন্যই মূলত অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।” চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, প্রাক্তন মন্ত্রীর দেখভালে কোনও খামতি নেই। সর্বক্ষণ তাঁকে চিকিৎসকদের নজরে রাখা হচ্ছে। যদিও, তদন্তকারীদের একাংশ মনে করছেন, প্রাক্তন মন্ত্রীর এটি কোনও কৌশল হলে তদন্তের গতি রুদ্ধ হতে পারে। তাই পুলিশি হেফাজতেই থেকে চলছে চিকিৎসা।

রাজ্যে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পের জন্য এবার সাহায্যের হাত বাড়াল বিশ্বব্যাংক

ইতিমধ্যেই,  তদন্তে নেমে শ্যামাপ্রসাদ ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নামে মোট ৬টি অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করেছে পুলিশ। পাশাপাশি শ্যামাপ্রসাদের নামে একাধিক জমির হদিশও পেয়েছেন তদন্তকারীরা। একাধিক পেট্রোল পাম্পের মালিক হিসাবেও উঠে এসেছে প্রাক্তন মন্ত্রীর নাম। শ্যামাপ্রসাদকে আজ আদালতে পেশ করা হয়েছে। শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী, ১০ দিনের হেফাজত চেয়েছে পুলিশ।

তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, জেরার মুখে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের লকারের কথা জানান রামশংকর। সেখান থেকে উদ্ধার হয়েছে কয়েক ভরি সোনার গয়না। পুলিশের দাবি রামশংকর জানিয়েছেন যে সেই গয়না শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের। ওই ব্যক্তির বাড়ি থেকে মিলেছে পোস্ট অফিসের ৭ টি অ্যাকাউন্টের তথ্য। যাতে নিয়মিত জমা পড়ত টাকা। কিন্তু তা তোলা হয়নি। এছাড়াও মিলেছে চারটি জমির দলিল ও ১৯ লক্ষ টাকা। সম্পত্তির কিছু শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের নামে, কিছু বেনামী। উদ্ধার হওয়া সম্পত্তি কার, ঘটনার সঙ্গে জড়িত কে কে তা জানার চেষ্টায় তদন্তকারীরা।

Copyright © 2024 NEWS24-BENGALI.COM | All Rights Reserved.

google-news