ওয়েব ডেস্ক: এবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে দলে যোগ দিলেন টেনিস তারকা লিয়েন্ডার পেজ। এদিনই সকালে ঘাসফুলের পতাকা হাতে তুলে নেন প্রখ্যাত অভিনেত্রী নাফিসা আলি ও গোয়ার উদ্যোগপতি মৃণালিনী দেশপ্রভু।
অলিম্পিকসে সিঙ্গেলসে ব্রোঞ্জজয়ী লিয়েন্ডার ভারতের অন্যতম সেরা টেনিস তারকা। ডাবলসে আটটি গ্র্যান্ড স্ল্যাম এবং মিক্সড ডাবলসে ১০টি গ্র্যান্ডস্ল্যাম জেতার কৃতিত্ব রয়েছে তাঁর। ভারতের খেলাধুলায় সর্বোচ্চ সম্মান খেলরত্ন পেয়েছেন। কেন্দ্র তাঁকে পদ্মশ্রী, পদ্মভূষণ, অর্জুন পুরস্কারেও সম্মানিত করেছে।
একুশের বাংলা বিধানসভা ভোটে জিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, এবার গোটা দেশজুড়েই খেলা হবে। ইতিমধ্যেই ত্রিপুরাতে ডালপালা মেলতে শুরু করেছে ঘাসফুল। এরই মধ্যে গোয়াতেও চমক জিইয়ে রাখলেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আরব সাগরের তীরে শুক্রবারের দুপুরে একেবারে ‘খেলা’ জমজমাট। টেনিস জগতে জগৎ জোড়া নাম যার, ভারতের গর্ব যিনি, গোয়ার সেই ভূমিপুত্র লিয়েন্ডার পেজকেই তৃণমূলে আনলেন মমতা।
তবে তারকা খেলোয়াড় ছাড়াও লিয়েন্ডারের তৃণমূলে যোগ দেওয়ার আরও একটি বড় তাৎপর্য রয়েছে। কারণ লিয়েন্ডার কলকাতার ছেলে। কলকাতায় জন্মেছেন। পড়াশোনাও করেছেন কলকাতাতেই। এমনকি জন্মসূত্রেও বাংলা যোগ রয়েছে লিয়েন্ডারের। বাংলার কবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের বংশধর লিয়েন্ডার। তাঁর মা জেনিফার পেজ কবির প্রপৌত্রী। লিয়েন্ডারের বাবা ভেস পেজ জন্মসূত্রে গোয়ান। যদিও ভেস কলকাতাতে থেকেছেন বেশি। সেই সূত্রেই কলকাতার লা মার্টিনিয়ারে পড়াশোনা লি-র। সেই হিসেবে বাংলা এবং গোয়ার দুই রাজ্যেরই প্রতিভূ বলা যায় লিয়েন্ডারকে। বাংলার তৃণমূলের গোয়ায় রাজনৈতিক সূচনার উপযুক্ত মুখও।
গোয়ায় মমতার উপস্থিতিতে তৃণমূলে যোগ দিলেন নাফিসা আলি
এদিন লিয়েন্ডার পেজকে পাশে নিয়েই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “মানুষের ওপর আমরা আস্থা রাখছি। এই বছরটা নতুন সকালের বছর হোক। গোয়া এখন খুবই অবহেলিত। আমরা আমাদের প্রতিশ্রুতি রাখব। দিল্লির লাড্ডু চলবে না। দিল্লির দাদা গিরিও চলবে না। গোয়ার মানুষই গোয়া চালাবে। আমরা রূপরেখা তৈরি করে দেব।” তিনি আর বলেন, “এরকম মোটেই ভাববেন না আমরা শুধু রাজনীতি করি। টেনিস, লন টেনিস, ব্যাডমিন্টন সব খেলতে পারি আমরা। ও (লিয়েন্ডার) টেনিস খেলে, আমি ব্যাডমিন্টন খেলতে পারি।”
তৃণমূলে যোগ দিয়ে লিয়েন্ডার পেজ বলেন, “দিদি আমাকে যে সুযোগ দিয়েছেন তার জন্য আমি কৃতজ্ঞ। আমি যখন দেশের হয়ে টেনিস খেলেছি, সেই সময় দিদি ক্রীড়া মন্ত্রী ছিলেন। খুবই উৎসাহ দিতেন, খুবই এনকারেজিং তিনি। আমার দেশের জন্য গত ৩০ বছর বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় গিয়েছি। দেশের হয়ে টেনিস খেলেছি। এখন টেনিস থেকে অবসর নেওয়ার পর এবার রাজনীতির মাধ্যমে আমি মানুষের জন্য, দেশের জন্য কাজ করতে চাই।” লিয়েন্ডারের কথায়, “দিদি প্রকৃত চ্যাম্পিয়ন। ওনার নেতৃত্বে কাজ করব সত্যিই আনন্দের। ধর্ম-বর্ণ-জাতির ভেদাভেদ নয়, আমার দেশ গণতন্ত্রের সংস্কৃতি ঐতিহ্যে বিশ্বখ্যাত হবে এটাই চাই। আমিও এই জয়যাত্রার অংশী হতে চাই।”
একদিনে কোভিশিল্ডের রেকর্ড সংখ্যক ডোজ় এসে পৌঁছল বাংলায়
এর আগে বহু ক্রীড়াবিদ তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন এ কথা সত্যি। কেউ কেউ আবার রাজনীতির ‘মোহ’ কাটিয়ে নিজের জগতেই ফিরে গিয়েছেন। কিন্তু লিয়েন্ডার পেজের মতো ‘হেভিওয়েট’ শুধু তৃণমূল কেন, অন্য কোনও রাজনৈতিক দলেও যাওয়া মানে সে দলের মান এক লাফে অনেকটাই বেড়ে যায়। ভারতীয় টেনিসের এই কিংবদন্তির যোগদানের পর তৃণমূল দাবি করতেই পারে, সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে তাদের একটা পরিচিতি তৈরি হয়েছে।
তিন দিনের সফরে বৃহস্পতিবার গোয়ায় এসেছেন মমতা। শুক্রবার সকালেই পানাজিতে গোয়ার তৃণমূল কর্মীদের নিয়ে সভা করেন। সেখানে মমতা বলেন, ‘‘আমি বহিরাগত নই।’’ এর পর ‘‘কোঙ্কণি ভাষায় বলেন, আমি আপনাদের বোনের মতো। আমি বাংলার মেয়ে, ভারতের মেয়ে। ভারত যদি আমার মাতৃভূমি হয়ে থাকে। তবে বাংলাও আমার মাতৃভূমি, গোয়াও আমার মাতৃভূমি। আমি প্রথম এখানে আসছি না। ১০ বছর আগে এখানে এসেছিলাম ফিল্ম ফেস্টিভালে। রেলমন্ত্রী হিসেবে এখানে এসেছি। মাডগাও তে। কোঙ্কণ রেলের কাজে এসেছিলাম। সেফটি ডিভাইস উদ্বোধনে।’’ এর পর তাঁর সংযোজন, ‘‘‘আমি গোয়ার মুখ্যমন্ত্রী হব না, কিন্তু গোয়ার উন্নয়নের জন্য কাজ করব।’