ওয়েব ডেস্ক : সামনেই বিধানসভা উপনির্বাচন। এবার নজরে ভবানীপুর কেন্দ্র। TMC-র তরফে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না হলেও, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভবানীপুর কেন্দ্র থেকে উপ-নির্বাচনে লড়বেন বলে দলীয় সূত্রের খবর। এ বারের বিধানসভা ভোটে ভবানীপুর থেকে জেতা শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় ইতিমধ্যেই বিধায়ক পদে ইস্তফা দিয়েছেন। তিনি খড়দহ বিধানসভা কেন্দ্রের উপ-নির্বাচনে লড়বেন বলে প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়েছে।
বিধানসভা ভোটে তৃণমূল বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে রাজ্যে ফের ক্ষমতায় আসায় ভবানীপুরের উপ-নির্বাচনে প্রার্থী দিতে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী না-চাইলেও তাঁর সঙ্গে এই ব্যাপারে সহমত পোষণ করছেন না বাম নেতৃত্ব। তাঁদের বক্তব্য, ভবানীপুরে সংযুক্ত মোর্চার প্রার্থী না-থাকলে তৃণমূলের গত ১০ বছরের কাজকর্মকে কার্যত বৈধতাই দেওয়া হয়, যে কাজকর্মের লাগাতার সমালোচনা এতদিন ধরে তাঁরা করে এসেছেন।
এ বার সংযুক্ত মোর্চার তরফে কংগ্রেস ভবানীপুর আসনে প্রার্থী দিয়েছিল। ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনেও ভবানীপুরে বাম-কংগ্রেস জোটের তরফে কংগ্রেসেরই প্রার্থী ছিলেন। বাম-কংগ্রেস-আইএসএফের সংযুক্ত মোর্চা অটুট থাকলে এবারেও ভবানীপুরের উপ-নির্বাচনে কংগ্রেসের প্রার্থী দেওয়ার কথা। কিন্তু মমতার বিরুদ্ধে অধীর প্রার্থী দিতে নারাজ। যা আবার মানতে পারছে না বামেরা। আলিমুদ্দিন স্ট্রিট নিজে থেকে সংযুক্ত মোর্চায় ভাঙন ধরানোর পক্ষপাতী নয়। তাই, অধীরের অবস্থান নিয়ে এখনই প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্য করতে চাইছেন না সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্ব।
অটুট রইল বামফ্রন্ট, তবে আগামী দিনে টিকবে কি সংযুক্ত মোর্চা
তবে দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের কথায়, ‘নির্বাচনকেও একটি রাজনৈতিক সংগ্রাম হিসেবে বামপন্থীরা দেখেন। যেখানে নির্দিষ্ট নীতির ভিত্তিতে বামপন্থীরা লড়াই করেন। নির্বাচন থেকে সরে যাওয়া মানে সেই নীতিগত লড়াই থেকে সরে যাওয়া। ভবানীপুরে যদি জোটের প্রার্থী না-থাকেন, তা হলে যে সব ভোটার তৃণমূল ও বিজেপি, দু’পক্ষকেই পছন্দ করেন না, তাঁরা কি করবেন?’
সিপিআইয়ের রাজ্য সম্পাদক স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, ‘বামপন্থীরা নির্বাচনকে একটি লড়াই হিসেবে দেখেন। সেখানে প্রার্থী না-দেওয়া মানে লড়াইয়ের ময়দান থেকে সরে যাওয়া। তা হলে মানুষের কাছে ভুল বার্তা যায়। হয় নিজেদের প্রার্থী দিতে হবে, না-হয় রাজনৈতিক ও নির্বাচনী সমঝোতা রয়েছে, এমন কোনও দলের প্রার্থীকে সমর্থন করতে হবে।’
কোভিশিল্ড, কোভাক্সিন ডোজ নেওয়া সত্ত্বেও ডেল্টা প্রজাতি দারা সংক্রামিত হতে পারে: AIIMS স্টাডি
আরএসপি-র সাধারণ সম্পাদক মনোজ ভট্টাচার্যও বলছেন, ‘নির্বাচনে জয়-পরাজয় পরের প্রশ্ন, আসল প্রশ্ন হলো, কোন নীতিগত অবস্থান নিয়ে আমরা নির্বাচনে সামিল হচ্ছি। নির্বাচন থেকে সরে যাওয়া মানে তো সেই নীতিগত জায়গা থেকে সরে যাওয়া! ভবানীপুরে যদি জোটের কোনও প্রার্থী না-থাকেন, তা হলে তো তৃণমূলের কাজকেই বৈধতা দেওয়া হয়!’
ফরওয়ার্ড ব্লকের রাজ্য সম্পাদক নরেন চট্টোপাধ্যায়েরও বক্তব্য, ‘নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার আমরা সম্পূর্ণ বিরোধী। প্রার্থী না-থাকলে মানুষের কাছে বিরূপ বার্তা যায়।’
চাকুরী জীবী দের জন্য দুঃসংবাদ, কমতে পারে টেক হোম স্যালারি
এই বিষয়ে প্রদেশ কংগ্রেসের মধ্যেই ভিন্নমত রয়েছে। অধীর বাবু ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে ভবানীপুরের উপ-নির্বাচনে প্রার্থী না-দিয়ে কোনও বার্তা দিতে চাইছেন কি না, তা নিয়েও জল্পনা রয়েছে। ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে বহরমপুরে সিপিএমের প্রার্থী না-থাকায় অধীরের জয়ের পথ প্রশস্ত হয়েছিল।
বিধানসভা ভোটের ফলে দেখা গেল, মুর্শিদাবাদে কংগ্রেসের সঙ্গে সিপিএম-ও দুর্বলতর হয়েছে। সেই জায়গায় প্রবল শক্তিশালী হয়েছে তৃণমূল। তাই, ২০২৪ সালে ভিন্ন কোনও সমীকরণের সম্ভাবনা অধীর বাবু খতিয়ে দেখছেন কি না, সেই ব্যাপারে প্রদেশ কংগ্রেসের অন্দরেই এখন জোর চর্চা। এখন দেখার আগামী দিনে ভবানিপুর কেন্দ্রে কারা প্রার্থী দ্যায়।